২৫ টাকার ইনজেকশন দিয়ে ডাক্তার নিলেন তিন হাজার টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল
প্রকাশিত: ১১:২১ পিএম, ০৫ মার্চ ২০১৯

বরিশালে ২৫ টাকা মূল্যের একটি ইনজেকশন পুশ করে রোগীর কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। প্রতারণার এ ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল নগরীর জর্ডন রোড সাউথ অ্যাপেক্স ডায়াগনস্টিক সেন্টারে (ডিজিটাল ল্যাব)। ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক নাজমুল হোসেন এক রোগীকে একটি নিউরো-ভি ইনজেকশন পুশ করেন। এর মূল্যবাবদ তিন হাজার টাকা নেয়া হয় বলে ভুক্তভোগী রোগী শাহজাহান মিয়া অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে নগরীতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাউথ অ্যাপেক্স ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে চিকিৎসক নাজমুল হোসেনের বিশাল সাইনবোর্ডে সাঁটানো। সেখানে লেখা রয়েছে এমবিবিএস (ঢাকা), পিজিটি (মেডিসিন) পাস। মেডিসিন, গ্যাস্ট্রোলজি, বাত-ব্যথা, হার্ট, স্ট্রোক, নাক, কান, গলা, বক্ষব্যাধি, চর্ম, যৌনরোগে উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত; সাবেক মেডিকেল অফিসার, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল; সাবেক সহ-রেজিস্ট্রার, গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা, বিএমডিসি:৭৩২৯৯।

রোগী শাহজাহান মিয়ার বাড়ি ভোলার গজারিয়া বাজার উত্তর দিঘলদী গ্রামে। পেশায় কৃষক। ছেলে মো. জুয়েলকে নিয়ে তিনি বরিশাল নগরীতে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন।

শাহজাহান মিয়ার ছেলে মো. জুয়েল জানান, কয়েক দিন আগে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য ধার-দেনা করে ১৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন তারা। শাহজাহান মিয়ার চিকিৎসা করানোর কথা শুনে প্রতিবেশী শাহজালাল চৌকিদারের অসুস্থ (হাতে ব্যথা) স্ত্রী শাহানুর বেগম তাদের সঙ্গে বরিশাল আসার ইচ্ছা পোষণ করন।

মঙ্গলবার সকালে লঞ্চযোগে ভোলা থেকে জুয়েল তার বাবা-মা, স্ত্রী ও প্রতিবেশী শাহানুর বেগমকে নিয়ে বরিশাল আসেন। বরিশাল লঞ্চঘাটে নেমে তারা এক দালাল অটোচালকের খপ্পড়ে পড়েন। তারা বান্দরোড রাহাত আনোয়ার হাসপাতালের ডা. মো. আনোয়ার হোসেনের চেম্বারে নিয়ে যেতে বলেন অটোচালককে। তবে অটোচালক তাদের জানান- ডা. মো. আনোয়ার স্যার বরিশালে নেই, তার অবর্তমানে রোগী দেখেন ডা. নাজমুল হোসেন। জর্ডন রোড সাউথ অ্যাপেক্স ডায়াগনস্টিক সেন্টারে (ডিজিটাল ল্যাব) তিনি বসেন। এরপর অটোচালক তাদের ডা. নাজমুল হোসেনের চেম্বারে নিয়ে যান। সেখান পৌঁছে সাউথ অ্যাপেক্স ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দায়িত্বরত ম্যানেজারের সঙ্গে অটোচালক তারের পরিচয় করিয়ে দিয়ে কমিশনের টাকা নিয়ে সেখান থেকে সটকে পড়েন।

মো. জুয়েল জানান, এরপর ম্যানেজার ডা. নাজমুল হোসেনকে দেখানোর জন্য শাহজাহান ও শাহানুর বেগমের কাছ থেকে ৬০০ টাকা করে মোট ১২০০ টাকা নেন। টাকা পরিশোধের পর ডা. নাজমুল হোসেন একে একে দুজনকে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য কাউন্টারে পাঠান। কাউন্টার ম্যানেজার পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শাহজাহানের কাছ থেকে ৫৫০০ টাকা ও শাহানুর বেগমের কাছ থেকে ৩০০০ টাকা নেন। শাহানুর বেগমের ডান হাতে ব্যথায় ভুগছিলেন। কিন্তু চিকিৎসক তাকে আল্ট্রাসনোগ্রামসহ রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা দেন। শাহজাহানের বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয়।

দুপুরে প্রাপ্ত রিপোর্ট দেখে ডা. নাজমুল হোসেন দাবি করেন- শাহজাহান মিয়া কিডনি রোগে আক্রান্ত (অথচ তার রিপোর্টে serum creatinine: 1.4 উল্লেখ ছিল)। চিকিৎসক নাজমুল হোসেন আরও বলেন, এই মুহূর্তে শাহজাহানের শরীরে একটি ইনজেকশন পুশ করতে হবে। ইনজেকশনটির তার কাছে আছে দাম তিন হাজার টাকা। তিন হাজার টাকা দেয়া মাত্রই একটি নিউরো-ভি ইনজেকশন পুশ করেন চিকিৎসক নাজমুল হোসেন। এদিকে শাহানুর বেগমের সকল রিপোর্ট ভালো দাবি করে তার প্রেসক্রিপশনে সাত ধরনের ওষুধ লিখে বিদায় দেয়া হয়।

মো. জুয়েল আরও জানান, ইনজেকশনটি পুশ করার পর খালি ভয়েল সকলের অগোচরে সংগ্রহ করেন। বিকেলে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে একটি ফার্মেসিতে ওই ইনজেকশনের খালি ভয়েল নিয়ে গেলে তিনি জানতে পরেন তার মূল্য মাত্র ২৫ টাকা। তখন তিনি বুঝতে পারেন দিনভর তাদের সঙ্গে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডাক্তার প্রতারণা করেছেন। বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে সংবাদকর্মীদের অভিযোগ করেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে চিকিৎসক নাজমুল হোসেন বলেন, আমার কাজ রোগী দেখা। রোগী কে, কীভাবে নিয়ে এসেছে সেটা জানানো আমার বিষয় নয়। এ বিষয়ে ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষ দায়ী বলে তিনি দাবি করে বলেন, ৬০০ টাকার ভিজিটের ৩০০ টাকা তাকে ডায়াগনস্টিক মালিককে দিতে হয়।

এছাড়া রোগী শাহানুরের হাতের ব্যথায় আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা কেন করা হলো জানতে চাওয়া হলে বিষয়টি এড়িয়ে যান চিকিৎসক নাজমুল হোসেন।

২৫ টাকা মূল্যের একটি ইনজেকশন পুশ করে রোগীর কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে চিকিৎসক নাজমুল হোসেন বলেন, দামের বিষয়টি জানা ছিল না। ওই টাকা রোগীকে ফেরৎ দেয়া হবে।

সাইনবোর্ডে লেখা মেডিসিন, গ্যাস্ট্রোলজি, বাতব্যথা, হার্ট, স্ট্রোক, নাক, কান, গলা, বক্ষব্যাধি, চর্ম, যৌনরোগে উচ্চতর প্রশিক্ষণের বিষয়ে সনদ দেখতে চাইলে তিনি ডা. নাজমুল হোসেন তার কোনো সনদ দেখাতে পারেননি।

তিনি বলেন, দুই বছর মেয়াদি পিজিটি (মেডিসিন) ও অর্থপেডিক্স কোর্স করছেন। বর্তমানে কোর্সটি চলমান রয়েছে। তাই সনদ দেখাতে পারছেন না।

সাইফ আমীন/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।