ভাড়াটিয়ার সঙ্গে পরকীয়া, স্বামীকে বলি দিলেন স্ত্রী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৩:৫৫ পিএম, ০৫ মার্চ ২০১৯

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পরকীয়ায় বাধা ও ধার নেয়া টাকা আত্মসাতের জন্যই মাত্র তিন হাজার টাকায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে পোশাককর্মী আমিনুল ইসলাম কালুকে গলা কেটে হত্যা করে তার স্ত্রী রিক্তা বেগম।

ভাড়া করার সময় এক হাজার ও খুনের পর দুই হাজার টাকা দেয়া হয় খুনিদের। সোমবার পৃথক চারটি আদালতে কালুর স্ত্রী রিক্তা বেগম (২৫) তার পরকীয়া প্রেমিক রেজাউল করিম পলাশ (৩০) ও তাদের ভাড়াটে খুনি মাসুম হোসেন এবং ইমরান হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ূন কবির, ফাহমিদা খাতুন, মাহমুদুল মহসিন ও আফতাবুজ্জামানের আদালত পৃথকভাবে চারজনের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

জবানবন্দিতে তারা জানিয়েছেন, মাত্র তিন হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে খুনি দিয়ে গলা কেটে কালুকে হত্যা করে তার স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক। পরকীয়া প্রেমে বাধা ও ধার নেয়া টাকা আত্মসাতের জন্যই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

শনিবার সকালে সোনারগাঁ উপজেলার কাইকারটেক কাফুরদী এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের তীর থেকে গলাকাটা অবস্থায় আমিনুল ইসলাম কালুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন পরিচয় নিশ্চিত করে কালুর ভাই সামছুল হক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এরপরই বেরিয়ে আসে হত্যার রহস্য।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন, সোনারগাঁ থানা পুলিশের ওসি মনিরুজ্জামান এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একাধিক টিম নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও বন্দর থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করেন ওসি।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, আমিনুল ইসলাম কালুর স্ত্রী রিক্তা বেগমের (২৫) সঙ্গে তাদের বাসার ভাড়াটিয়া রেজাউল করিম পলাশের (৩০) পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ ঘটনার জেরে কালুকে হত্যার পরিকল্পনা করে রেজাউল করিম পলাশ ও স্ত্রী রিক্তা বেগম। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাসুম ও ইমরানকে ভাড়া করা হয়। ১ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে রাত সাড়ে ৮টায় কালুকে চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে মরদেহ ফেলে যায় তারা। পরে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারসহ হত্যায় ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়।

সোনারগাঁ থানা পুলিশের এসআই রাজু বলেন, কালুর স্ত্রী তাদের ঘরের পাশের একটি রুম ব্যাচেলরদের ভাড়া দেয়। সেই ব্যাচেলরদের একজন রেজাউল করিম পলাশ। পলাশের সঙ্গে কালুর স্ত্রী রিক্তা বেগমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কালু কারখানায় কাজে চলে যাওয়ার পর পরকীয়া ও দৈহিক সম্পর্কে মিলিত হয় রিক্তা ও পলাশ। বিষয়টি কালুর বাবা আজমত মিয়া ও ছোট ভাই সামছুল হক দেখে ফেলে একাধিকবার বাধা দেয়। তারপরও কালু বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে কালু জমি বিক্রি করে দুই লাখ টাকা ঘরে এনে রাখে। সেই টাকা থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা কালুর স্ত্রী রিক্তা তার পরকীয়া প্রেমিক পলাশকে ধার দেয়। সম্প্রতি কালু পরকীয়া প্রেমে বাধা দিয়ে রিক্তার কাছ থেকে ধার নেয়া ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার জন্য তাগিদ দেয়। এরপরই কালুকে হত্যার পরিকল্পনা করে রিক্তা ও পলাশ।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান বলেন, জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। জবানবন্দিতে কালুকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে তারা।

এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।