নারায়ণগঞ্জে আ.লীগের ‘গোপন’ চিঠি নিয়ে তোলপাড়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: ১২:০৯ পিএম, ০৫ মার্চ ২০১৯

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের উপজেলাগুলোতে জেলা আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। কেন্দ্রে যাদের নাম পাঠানো হয়নি তারা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা থেকে পাঠানো তালিকা অনুযায়ী দলীয় মনোনয়ন না দেয়াসহ কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাঠানো চিঠি নিয়ে দলের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান শাহজালালের নাম স্থানীয়ভাবে চূড়ান্ত করা হলেও কেন্দ্রে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাঠানো চিঠিতে তার নাম ছিল না। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুজাহিদুর রহমান হেলু সরকারের নাম কেন্দ্রে পাঠান। আওয়ামী লীগ শাহজালালকে বাদ দিয়ে হেলু সরকারকেই মনোনয়ন দিয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তারা তৃণমূল বসে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেখানে আবার জেলার নেতারা হস্তক্ষেপ করেছেন। আর এতে করে দলের অভিভাবকদের ওপর ক্ষোভ বাড়ছে। তাছাড়া জেলা সভাপতি আবদুল হাইয়ের অনুষ্ঠানে সেখানকার মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল পারভেজকে দেখা গেছে। উপজেলায় মনোনয়ন পাওয়া হেলো সরকার মূলত ইকবাল পারভেজের ঘনিষ্ঠজন।

জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও এমন কোনো আচরণ বা চিঠি চালাচালি হয়েছে কি-না সেটা নিয়েও নেতাকর্মীদের মাঝে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কারণ কেন্দ্রীয় কমিটি জেলার চিঠির ওপরই মনোনয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করছে। এ ক্ষেত্রে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের নাম সবার ওপরে থাকলেও কেন্দ্র থেকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ কারণে বন্দর উপজেলায় দলীয় মনোনয়নে কী ঘটবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

গত ১ মার্চ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দলীয় প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের তিনটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীতদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া, আড়াইহাজারে মুজাহিদুর রহমান হেলু সরকার ও সোনারগাঁয়ে মোশারফ হোসেন।

স্থানীয় সূত্র বলছে, এই তিনটি উপজেলাতেই চলতি মেয়াদে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের পছন্দকে মূল্যায়ন করা হয়নি। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন করা হয়েছে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রেরিত তালিকাতেও কোনো কোনো মনোনীত প্রার্থীর নাম ছিল না। কিন্তু তাদেরকেও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের উপজেলা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সোনারগাঁ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও এফবিসিসিআই’র পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেনের নাম পাঠানো হয়েছিল।

এদের মধ্যে বর্তমান মেয়াদে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের পছন্দ ছিল সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামকে। কিন্তু তাকে দলীয় মানোরয়ন না দিয়ে মোশারফ হোসেনকে দেয়া হয়েছে। তিনি সম্পর্কে সোনারগাঁয়ের সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সারের চাচা। মোশাররফ হোসেন এক সময়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। গত সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে সিংহ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন কায়সার। কিন্তু ভোটের মাত্র ৭২ ঘণ্টা আগে তিনি সরে দাঁড়ান।

রূপগঞ্জ উপজেলায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মোল্লা ও আওয়ামী লীগ নেতা তাবিবুল কাদির তমালের নাম পাঠানো হয়েছিল। এদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পছন্দ ছিল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মোল্লাকে। কিন্তু তাকে মনোনয়ন না দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়াকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি মূলত গত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

অন্যদিকে আড়াইহাজার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে শুধুমাত্র উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহজালালের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মুজাহিদুর রহমান হেলু সরকারকে। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজের পছন্দের লোক ছিলেন। তবে গত ৫ ফেব্রুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতির কাছে এক চিঠিতে মুজাহিদুর রহমান হেলুকে মনোনয়ন দেয়ার অনুরোধ করেন।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল জানান, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিষয়ে আমাদের ব্যক্তিগত কোনো সুপারিশ ছিল না। স্থানীয় এমপি তৃণমূল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে তিনজন প্রার্থীর নাম দিয়ে আমাদের কাছে পাঠানোর পর আমরা তা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। সোনারগাঁয়ে যেহেতু আওয়ামী লীগের এমপি নেই সেখানে তৃণমূলের নেতৃবৃন্দরা যেভাবে তালিকা তৈরি করেছে সেভাবে আমরা কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠিয়েছি।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, উপজেলা নির্বাচনে কোনো উপজেলায় আমাদের পছন্দের কোনো প্রার্থী ছিল না। এটা নিয়ে কেউ যদি সমালোচনা করে তাহলে না বুঝে সমালোচনা করছে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলাগুলো থেকে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তিনজন করে প্রার্থীর তালিকা তৈরি করে আমাদের কাছে পাঠালে আমরা তাতে স্বাক্ষর করে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সুপারিশ করে পাঠিয়েছি। তিনটি উপজেলার মধ্যে আড়াইহাজার উপজেলায় স্থানীয় এমপি তিনজনের মধ্যে ১নং প্রার্থীর পক্ষে সুপারিশ করেছিলেন।

শাহাদাত হোসেন/আরএআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।