এলাকাবাসীর অভিযোগ সত্য, কাজ বন্ধ করে দিলেন এমপি
নদী খনন করে নদীতেই ফেলা হচ্ছে মাটি। ফলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সেই সঙ্গে নদী খননের নামে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এভাবেই চলছিল নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার আত্রাই ও গুমানী নদীর খননকাজ।
নদী খননের মাটি সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলা হবে বলে প্রকল্প পরিচালক সাইদুর রহমান দাবি করলেও তার কথা বিশ্বাস হয়নি স্থানীয়দের। তাদের দাবি, যদি এ মাটি সরানো না হয়, তখন এর দায়ভার কে নেবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ৩০০ ফিটের নদীর মাঝখানে ৩০-৪০ শতাংশ জায়গা খনন করা হচ্ছে। এতে নদীতে নালা তৈরি হচ্ছে। আর দুই পাশ সংকুচিত হয়ে নদীর প্রশস্ততা কমে যাচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস খননস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের সত্যতা পান এবং সোমবার নদী খননকাজ বন্ধ করে দেন।
এমপি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, নদী দুটির নাব্যতা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদী দুটির মাঝ বরাবর খনন করলেও মাটি ফেলছে নদীতেই। এতে উভয় পাশ থেকে সংকুচিত হচ্ছে নদী। বর্ষাকালে এসব মাটি স্রোতে ভেসে আবারও ভরাট হয়ে যাবে নদী। তাই জনস্বার্থে খননকাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আতাহার হোসেন বলেন, বিআইডব্লিউটিএ বিভাগ যেভাবে নদী ড্রেজিং করে বালু বা মাটি পাড়ের ওপরে ফেলে দেয়, সেভাবে এখানে নদী খনন হচ্ছে না। মেশিন দিয়ে মাটি কেটে নদীতেই ফেলা হয়। এতে কিছুদিন পরই নদী ভরাট হয়ে যায়। কাজেই এভাবে সরকারি টাকা নষ্ট করে নদী খনন করার চেয়ে না করাই ভালো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের নামে ওয়েস্টার্ন ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলার এরশাদনগর থেকে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্রনগর রাবার ড্যাম পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আত্রাই ও গুমানী নদীর খননকাজ বাস্তবায়ন করছে। ওই খননকাজে ৪২ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নদী দুটির প্রস্থ ও স্থানভেদে ১৮০ থেকে ২২০ ফিট পর্যন্ত। কিন্তু খননের মাটি নদীর দুই পাড়ের মাঝ বরাবর ফেলা হচ্ছে। এতে ৫০ ফিটের বেশি খনন হচ্ছে না। খননের মাটি নদীর ওপরে ফেলে বেঁধে দিলে খননের উপকারিতা মিলবে না। এতে শুধু টাকাই নষ্ট হবে, কাজের কাজ কিছুই হবে না। তাই বিষয়টি স্থানীয় এমপিকে জানানো হয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একাংশের সাইড ম্যানেজার মফিজুল ইসলাম বলেন, দরপত্রে উল্লেখ আছে ৮০-৮২ ফিট প্রস্থে গভীরতা ১০-১২ ফিট এবং খননের জায়গা থেকে ৩৮-৪০ ফিট দূরত্বে মাটি ফেলার নির্দেশ রয়েছে। সেই মোতাবেক কাজ চলছে। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশে খননকাজ এখন বন্ধ রয়েছে।
চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়কারী ও বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বলেন, নদী খননে অনিয়ম হলে কোনো সুফল আসবে না। নদীর মাটি পাড়ের ওপর না ফেললে গভীরতা ও প্রশস্ততা বাড়বে না। বরং এতে দখলদারদের সুবিধা হবে। আর প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ারদের পকেট ভারি হবে।
বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকল্প পরিচালক (পিডি) সাইদুর রহমান বলেন, নদী খননের কোনো মাটি নদীর মধ্যে থাকবে না। সব সরিয়ে নেয়া হবে। এতে নদী প্রশস্ত হবে এবং গভীরতাও বাড়বে।
রেজাউল করিম রেজা/এএম/জেআইএম