মরার আগে বয়স্কভাতার কার্ড পামু না

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৫:৪৯ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপারা ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের ১নং মহল্লায় থাকেন জীবন নেছা। জাতীয় পরিচয়পত্র (৬৭১৬৮৫৫৮২৭৬৪২) অনুসারে তার বয়স ৭৮ বছর। স্বামী হারিয়েছেন ১৫ বছর আগে।

এক ছেলে ও এক মেয়ের সংসার তার। অভাব আর হাহাকারে জীবন নেছা নামেই যেন জীবন বাঁচিয়ে রেখেছেন এই বৃদ্ধা। বিধি অনুযায়ী বিধবাভাতা ও বয়স্কভাতার কার্ড পাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু কোনোটি পাননি তিনি।

স্বামী আব্দুল করিম মারা যাওয়ার পর একমাত্র ছেলে সংসারের হাল ধরার কথা ছিল। কিন্তু একমাত্র ছেলেটি তার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। ফলে অভাবের সংসারে বোঝা হয়ে দাঁড়ায় দুটি মানুষ। এরপরও মানুষের বাড়িতে কাজের বিনিময়ে দু’মুঠো খাবার খেয়ে কোনোমতে জীবন বাঁচিয়ে রেখেছেন জীবন নেছা। বর্তমানে বয়সের ভারে কাজ করতে পারেন না, চলতে-ফিরতে কষ্ট হয় তার। এ অবস্থায় কেউ কিছু দিলে খান, না হয় অনাহারে দিন কাটে তার।

বাংলাদেশ সরকারের বিধি অনুযায়ী পুরুষদের ৬৫ আর নারীদের ৬২ বছর বয়স হলে বয়স্কভাতা পাওয়ার কথা রয়েছে। রূপগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১৫ হাজারের অধিক নারী ও পুরুষ পাচ্ছেন বয়স্কভাতা। কিন্তু এ বয়স্কভাতা পাচ্ছেন না জীবন নেছা।

কায়েতপারা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় ইউপি সদস্যদের মদদপুষ্ট, সমর্থক ও আত্মীয়-স্বজন না হলে দেয়া হয় না বয়স্কভাতার কিংবা বিধবাভাতার কার্ড। উপজেলা প্রশাসনের লোকজন সঠিকভাবে বিষয়টি তদারকি না করায় প্রকৃত গরিব ও অসহায়রা বয়স্কভাতার কিংবা বিধবাভাতার কার্ড পান না।

এ বিষয়ে বৃদ্ধা জীবন নেছা বলেন, ভাতার কার্ডের জন্য স্থানীয় মহিলা লীগ নেত্রী মনোয়ারা মনুর কাছে যাই। তিনি পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। তার দাবিকৃত পাঁচ হাজার টাকা দিতে না পারায় বয়স্কভাতার কার্ড পাইনি। এছাড়া স্থানীয় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য বিউটি আক্তারের কাছে বয়স্কভাতার কার্ড চাইতে একাধিকবার গিয়েছিলাম। তিনিও কার্ড দেননি। জানি না আমার কত বয়স হলে বয়স্কভাতার কার্ড পামু। মনে হয় মরার আগে বয়স্কভাতার কার্ড পামু না।

৭৮ বছরের বৃদ্ধা জীবন নেছা কেন বয়স্কভাতা ও বিধবাভাতার কার্ড পাননি এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য বিউটি আক্তার বলেন, জীবন নেছা আমার কাছে সরাসরি আসেননি। তাই তার বিষয়টি আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোলাইমান হাসান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সভাপতি ও ইউপি সদস্যদের বাছাই কমিটির সদস্য করা হয়। তাদের বাছাইকৃত তালিকার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বয়স্কভাতার কার্ড দেয়া হয়। কিন্তু চনপাড়ার জীবন নেছাকে কোনো তালিকায় রাখা হয়নি। তাই তিনি কার্ড পাননি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, জীবন নেছার মতো আরও যারা প্রকৃত হতদরিদ্র ভাতার কার্ড পাননি তাদের দ্রুত ভাতার আওতায় আনা হবে।

মীর আব্দুল আলীম/এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।