লোকসানের শঙ্কায় কমতে বসেছে বোরো চাষ
পলিমাটির জেলা ভোলায় প্রাচীনকাল থেকেই চাষিদের প্রধান শস্য ধান। বিশেষ করে কৃষিপ্রধান এই জেলার কৃষকরা ধান চাষের ওপর বিশেষ জোর দেন। এক সময় ধান চাষ করে অধিক লাভবান হতেন চাষিরা। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে শ্রমিক, সার, কিটনাশক, পানিসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেড়েছে কয়েকগুন। কিন্তু সেই অনুপাতে ধানের দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই দিন দিন কমে যাচ্ছে বোরো চাষির সংখ্যা।
তবে কৃষি বিভাগ বলছে খরচ কমিয়ে বোরো চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে উন্নত জাতের বীজ, সার ব্যবহারে পরামর্শ ও প্রনোদনা প্রদান করছেন তারা।
ভোলা সদরের শান্তিরহাট এলাকার কৃষক মোজাম্মেল মিয়া বলেন, অনেক বছর ধরে বোরো ধান করে আসছি। এবছরও ১ একর জমিতে বোরো আবাদ করেছি। এতে সব মিলিয়ে আমার ৩৫/৪০ হাজার টাকা খচর হবে। ধান ৬০/৭০ মণ পেতে পারি। কিন্তু বিক্রি করতে গেলে যদি ভালো দাম না পাই তাহলে অনেক টাকা লোকসান হবে।
বয়স্ক কৃষক হারুন মোল্লা বলেন, বর্তমানে কৃষি কাজের সব কিছুর দাম বেশি। ধান চাষ করে লাভের চেয়ে লোকসান হয় বেশি।
সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নের ব্যাংকেরহাট এলাকার কৃষক মো. হামিদ বলেন, গত বছর পানির দাম ছিল ৪শ টাকা এবার হয়েছে ৬ টাকা। সার, কিটনাশক, পানিসহ বোরো চাষে ব্যবহৃত সকল উপকরণের দাম সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে কৃষকদের হাতের নাগালে রাখার দাবি জানান তিনি ।
তবে সেচ পাম্প ম্যানেজার মো. ফিরোজ উদ্দিন বলেন, বর্তমানে বিদ্যুতের দাম এবং ক্ষেতে পানি দিতে ড্রেন করার জন্য শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের কাছ থেকে তারা বাধ্য হয়ে সেচের খরচ বেশি নিচ্ছেন।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ বেদনাথ বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গত বছর বোরো আবাদে লক্ষ্যমাত্র ছিল ৪৪ হাজার ৮৩৯ হেক্টর। আর আবাদ হয়েছে ৬৫ হাজার ৯৩৫ হেক্টর। এছাড়াও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৭৪ হাজার ০৪ মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৪৭৫ মেট্রিক টন।
এ বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৬৪ হাজার ৪৬০ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৫৪ মেট্রিক টন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর। বাকি যে কদিন সময় আছে এর মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
জুয়েল সাহা বিকাশ/এফএ/এমকেএইচ