একজন দিত খুন্তির ছ্যাঁকা, আরেকজন করত ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল
প্রকাশিত: ০৫:৪০ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বরিশাল নগরীর ২৯নং ওয়ার্ডের লুৎফর রহমান সড়কের বাসিন্দা মুদি দোকানি মজিবর রহমান হাওলাদারের বাসায় এক বছর আগে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নেয় ১৪ বছরের এক কিশোরী।

প্রথম প্রথম ভালো ব্যবহার করতেন মজিবর রহমান (৪৫) ও তার স্ত্রী সায়লা রহমান (৩০)। কয়েকদিন পর কিশোরীর ওপর কারণে-অকারণে নির্যাতন চালাতে শুরু করেন সায়লা ও তার স্বামী মজিবর।

সবসময় বাসায় আটকে রাখা হতো কিশোরীকে। কাজে একটু ভুল হলেই গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিতেন মজিবর-সায়লা দম্পতি। পাশাপাশি গরম আয়রন মেশিন দিয়ে কিশোরীকে ছ্যাঁকা দেয়া হতো।

আয়রনের ছ্যাঁকায় তার বাম গালে চামড়া পুড়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে তার। ক্ষুধার কথা বললে দেয়া হতো পচা ও বাসি খাবার। খুন্তির ছ্যাঁকার পাশাপাশি মজিবর রহমানের দোকানের কর্মচারী মাসুম সুযোগ পেলেই ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করত।

প্রতি রাতে কিশোরীর আর্তনাদ ও চিৎকার শুনতেন প্রতিবেশীরা। বুধবার রাতে স্থানীয় এক বাসিন্দা বিষয়টি বিমানবন্দর থানা পুলিশকে জানান। রাতেই বিমানবন্দর থানা পুলিশের ওসি আ. রহমান মুকুলের নেতৃত্বে ওই বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। উদ্ধার করা হয় নির্যাতিত গৃহকর্মীকে। সেই সঙ্গে গৃহকর্তা মজিবর, স্ত্রী সায়লা এবং দোকানের কর্মচারী মাসুমকে গ্রেফতার করা হয়।

barishal-1

বৃহস্পতিবার সকালে নির্যাতিত ও ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।

বিমানবন্দর থানা পুলিশের ওসি আ. রহমান মুকুল বলেন, নির্যাতিত কিশোরীর বাড়ি রহমতপুর এলাকায়। তার এক চাচার মাধ্যমে মজিবর রহমানের বাসায় কাজ নেয়। কাজে সামান্য ভুল করলে তার ওপর চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। গরম খুন্তি ও আয়রন মেশিন দিয়ে কিশোরীকে ছ্যাঁকা দেয়া হতো। ঠিকমতো খাবার দেয়া হতো না। মজিবর-সায়লা দম্পতির নির্যাতনে গালসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে কিশোরীর। পালাতে যেন না পারে সেজন্য কিশোরীকে আটকে রাখা হতো বাসায়। মজিবর-সায়লা দম্পতি কখনো বাসার বাইরে গেলে পাহারায় রাখা হতো দোকান কর্মচারী মাসুমকে। মাসুম এই সুযোগে একাধিকবার কিশোরীকে ধর্ষণ করেছে।

ওসি আ. রহমান মুকুল আরও বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি গৃহকর্তা মজিবরকে জানালে উল্টো কিশোরীকেই মারধর করা হতো। ধর্ষণের কথা বাইরের লোকজনের কাছে যেন না বলে সেজন্য কিশোরীকে হত্যার হুমকি দেয় মজিবর।

বুধবার রাতেও কিশোরীকে নির্যাতন করা হয়। মজিবরের বাসা থেকে চিৎকার শুনে স্থানীয় এক বাসিন্দা ফোন দিয়ে বিষয়টি বিমানবন্দর থানা পুলিশকে জানায়। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় কিশোরীকে। এ সময় গৃহকর্তা মজিবর, স্ত্রী সায়লা এবং দোকানের কর্মচারী মাসুমকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে বলেও জানান ওসি।

সাইফ আমীন/এএম/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।