বাবাকে ধরতে গিয়ে মেয়ের টাকা নিয়ে গেল কর্মকর্তারা
ভৈরবে কালা মিয়া (৪৯) নামে এক মাদক সেবনকারীকে ধরতে গিয়ে তার মেয়ের চাকরি বেতনের টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
বুধবার আটক মাদক সেবনকারী কালা মিয়ার মেয়ে শান্তা আক্তার ভৈরবের স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন। ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার ভৈরবের শিবপুর ইউনিয়নের সম্ভুপুর এলাকায়।
শান্তা অভিযোগে জানান, আমার বাবা কালা মিয়া একজন রিকশাচালক এবং তিনি নিয়মিত গাঁজা সেবন করেন। সোমবার ভৈরব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অফিসের পরিদর্শক মাসুদুর রহমান, উপ-পরিদর্শক সেন্টু রন্জন নাথ ও সিপাহি সুফিয়া বেগমসহ ৫ জন আমাদের বাড়িতে এসে ঘরে প্রবেশ করে আমার বাবাকে আটক করে। অভিযানের সময় ঘর তল্লাশি করে কয়েকটি পলিথিনের পুটলাই সাড়ে ৩শ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে। এ সময় তারা আলমারি থেকে আমার ভ্যানিটি ব্যাগে রাখা ১১ হাজার ৪শ’ টাকা নিয়ে নেয়। তখন আমি তাদের বলি, আমি ভৈরবে একটি কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ করি এবং আমরা খুবই গরিব পরিবার। টাকাগুলো আমার মাসিক বেতনের এবং আজ সকালে ব্যাংক থেকে টাকা উঠাইয়া এনেছি। এ টাকায় সারা মাস আমাদের সংসার চলে তাই টাকাগুলো আপনারা নেবেন না। ঘরে গাঁজা যেহেতু পেয়েছেন তাই আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যান বলে জানান শান্তা।
তার কথা শুনে মাদকের কর্মকর্তারা বলেন বেশি কথা বলবেন না, এটা মাদক বিক্রির টাকা। সরকারি কোষাগারে টাকাগুলো জমা হবে। মাদক অফিসের সিপাহি সুফিয়া বেগম ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকাগুলো নিয়েছেন বলে শান্তা আক্তার দাবি করেন।
ঘটনার দিন সোমবার কালা মিয়াকে আটকের পর ভৈরব থানায় রাতেই একটি মামলা করেন উপ-পরিদর্শক সেন্টু রন্জন নাথ। মামলা নম্বর ১৯। মামলার এজাহারে গাঁজার পরিমাণ দেখানো হলেও টাকা উদ্ধারের কোনো কথা লেখা নেই। স্থানীয় সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কর্মকর্তারা বিষয়টি অস্বীকার করেন।
বুধবার সকালে সম্ভুপুর এলাকায় শান্তা আক্তারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের পরিবারটি অতি দরিদ্র। তারা দুই বোন, দুই ভাই। ভাইয়েরা ছোট। বাবা রিকশাচালক কালা মিয়া এজমার রোগী হলেও দীর্ঘদিন যাবৎ গাঁজা সেবন করে। বড় বোন তানিয়া বেগম বিবাহিত হলেও শান্তার বিয়ে হয়নি। তিনি ভৈরবে একটি কারখানায় ৮ হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকরি করে। আরও মা মর্জিনা বেগম বেকারিতে দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করেন।
এ বিষয়ে ভৈরব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মাসুদুর রহমান অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা সব সময় মিথ্যা অভিযোগ করে থাকেন। তাদের পরিবার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং ঘটনার দিন আমাদের কেউ তাদের টাকা নেয়নি। শান্তা আক্তারের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে জানান, তাদের অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক।
আসাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস/এমএস