মারা যাওয়ার ২ ঘণ্টা পর অন্য হাসপাতালে রেফার্ড
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার দুস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় পলি অধিকারী (২১) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়াতে প্রসূতি পলি অধিকারীর মৃত্যুর দুই ঘণ্টা পর মরদেহে অক্সিজেন দিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা বলেছেন, প্রসূতির অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে। তার মরদেহে অক্সিজেন দিয়ে দুই ঘণ্টা পর এখানে পাঠানো হয়েছে।
বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গোপনে দুস্থ মানবতার হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সুমন ফকির, কর্মকর্তা রুস্তম ও গোলাম মোস্তফা তাদের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে পলির মরদেহ নিয়ে যান মামার বাড়ি শশিকর থানার দোনারকান্দি গ্রামে।
পরে মামা দধিরামের বাড়িতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে মরদেহের সৎকার করা হয়। বিষয়টি যাতে প্রশাসনের নজরে না আসে এবং এ ঘটনায় কেউ মামলা করতে না পারে সেজন্য তড়িঘড়ি করে মরদেহের সৎকার করা হয় বলে জানান পলির মামা দধিরাম।
এদিকে, বিষয়টি জানাজানি হলে প্রসূতির স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নিহত পলি অধিকারী আগৈলঝাড়ার বাহাদুরপুর গ্রামের লিটন অধিকারীর স্ত্রী।
পলির স্বজনরা জানান, দুই বছর আগে পলির সঙ্গে লিটনের বিয়ে হয়। পলি অন্তঃসত্ত্বা হলে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ও সাবেক ইউপি সদস্য কালীপদ ওঝার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলে। প্রসবব্যথা শুরু হলে ৩০ জানুয়ারি পলিকে দুস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পল্লী চিকিৎসক কালীপদ ওঝা বলেন, দুস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসক প্রশান্ত রায়ের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু হাসপাতালের অনভিজ্ঞ চিকিৎসক আশ্রাফুল আলম ও হাসপাতালের মাঠকর্মী অর্পনা পান্ডে রোগীকে সিজারিয়ান করাতে হবে বলে জানান। সিজারিয়ান অপারেশন না করে স্বাভাবিক প্রসবের কথা জানালে অর্পনা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার বাগবিতণ্ডা হয়।
পল্লী চিকিৎসক কালীপদ ওঝা আরও বলেন, এরপর ৩১ জানুয়ারি পলির সিজারিয়ান অপারেশন করেন গৌরনদী হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) বিপুল বিশ্বাস। অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ছিলেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক বর্তমানে ডেপুটেশনে আগৈলঝাড়ায় কর্মরত চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন। ওইদিন সন্ধ্যা ৭.১০ মিনিটে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ভুল চিকিৎসায় কন্যাসন্তান জন্ম দিয়ে মারা যান পলি।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়াতে প্রসূতি পলি অধিকারী মৃত্যুর দুই ঘণ্টা পর অক্সিজেন দিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে আনার অনেক আগেই প্রসূতির মৃত্যু হয়। মৃত্যুর দুই ঘণ্টা পর এখানে রোগী আনা হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গোপনে দুস্থ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সুমন ফকির, কর্মকর্তা রুস্তম ও গোলাম মোস্তফা তাদের নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে পলির মরদেহ নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে দুস্থ মানবতা হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সুমন ফকির বলেন, পলির হার্টের সমস্যা ছিল। অপারেশনের পর হার্টের সমস্যায় মারা যান পলি।
হার্টের পরীক্ষা ও চিকিৎসা না করিয়ে অপারেশন করানো ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করে এলাকার প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখতে অনুরোধ করেন সুমন ফকির।
হাসপাতালের পরিচালক ও স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক ডা. হিরন্ময় হালদারের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশের ওসি মো. আফজাল হোসেন বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ করেনি। আভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাইফ আমীন/এএম/এমএস