‘রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না হলে প্রত্যাবাসন নয়’
মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না হলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।
তিনি বলেন, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, রোহিঙ্গাদের পরিচিতি এবং তাদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। তাই যতদিন তারা এখানে থাকবে, ততদিন তাদের মানবাধিকার রক্ষার দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। এ সময়টুকুতে যেন কক্সবাজারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট না হয় সে ব্যাপারে সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
সোমবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের করণীয়’ বিষয়ক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে কাজী রিয়াজুল হক আরও বলেন, রোহিঙ্গারা যে আমার দেশের অভ্যন্তরে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করবে না, মাদক ছড়িয়ে দেবে না, সন্ত্রাস সৃষ্টি করবে না তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। তাই রোহিঙ্গাদের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে যেন স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। তাই যতদিন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু না হওয়া পর্যন্ত সকলকে ধৈর্যর সঙ্গে সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, মিয়ানমারের সদিচ্ছা না থাকায় বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষীয় চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পরও প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখেনি। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
তিনি বলেন, মাত্র ছয় হাজার একর এলাকায় প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। প্রশাসনের আন্তরিকতার কারণে এখনো সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। ক্যাম্প এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বা ধর্মীয় উগ্রবাদ যেন বেড়ে উঠতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে কাজ করতে হবে।
সভায় বিশেষ অতিথি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি অনেক পুরাতন। সে সময় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা ছিলো নগণ্য। একই সঙ্গে মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীর সদিচ্ছা থাকায় প্রত্যাবাসনও করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মাসে এক সঙ্গে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিস্তার লাভ করেছে। যা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তাই রোহিঙ্গাদের মানমর্যাদা রক্ষা করতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. কামল হোসেন বলেন, ক্যাম্পে সীমানাপ্রাচীর না থাকায় ১১টি চেকপোস্ট থাকার পরও রোহিঙ্গারা প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সীমানাপ্রাচীর জরুরি। অন্যথায় রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারে।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/এমএস