তাও কি খনি হবি!


প্রকাশিত: ১১:৫৮ এএম, ২৫ আগস্ট ২০১৫

তোমহার মতন মানুষেই (সাংবাদিক) তো বাড়িত আসিয়া হামাক কহিছে বিচার হবি। সেই আশাতেই তো বাঁচি আছি। সেই দিন গ্রামের মানুষগুলার সঙ্গে মোর বেটাটাও মিছিলত গেল, আর ঘুরি আসিলনাই। মানুষ হামার বাড়িত আসি খবর দিয়া গেইল গুলি লাগি আমিন (ছেলের নাম) মরি গেইছে। খনি হইলে তো বাড়ি-ঘর থাকিবেনা। দেশটা ধ্বংস হই যাবি। ছাওয়ালটা মরি গেইল, তাও কি খনি হবি। হারা (আমরা) খনি চাহিনা।

কথা বলার এক পর্যায়ে অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর নিজ বাড়ির বারান্দায় চেয়ারে বসে রেহেনা খান জাগো নিউজের এ প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন।

রেহানা খান হলেন ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ী উম্মুক্ত কয়লা খনির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত আমিন খানের মা। এদিন দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে খনি বাস্তবায়নের প্রস্তাবকারী এশিয়া এনার্জি নামক বহুজাতিক বিদেশি কোম্পানির ফুলবাড়ী অফিস ঘেরাও কর্মসূচি চলছিল। আর এই কর্মসূচিকে অংশ নিতে এসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর (তৎকালীন বিডিআর) সদস্যদের গুলিতে নিহত হন আমিন খান।

ফুলবাড়ী উপজেলার বারো কনা গ্রামে তাদের বাড়ি। আমিন খানের বাবার নাম আব্দুল হামিদ খান।

মা রেহানা খান জানেন না ছেলে হত্যার বিচার কি ভাবে হবে। থানায় বা কোর্টে কোনো মামলা আছে কি না।


কেমন করে বিচার হবে জানতে চাইতেই রেহানা খান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ধীরে ধীরে বলতে শুরু করলেন, হারা (আমরা) পড়ালেখা জানিনা, মুখ্য-শূখ্য মানুষ। হারা কেমন করি জানিম,বিচার কেমন করি হবি। তেল গ্যাসের নেতারা মামলা করিছে কি নাই হারা কহিবাও (বলতেও) পারিমনাই (পারিনা)। হামার বাড়ির গড়ত (কাছে) জুয়েলের বাড়ি (তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ফুলবাড়ী শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলাম জুয়েল)। ওহে এনা আসিয়া খবর সবর নেয়। আর কেহ আইসেনা।
 
৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে বড় ছেলের মৃত্যুকে তারা মেনে নিয়েছেন দেশের জন্য মৃত্যু হিসেবে। এই পরিবারটির কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। শুধু চান ছেলে হত্যার বিচার।

প্রতিবেশিরা আমাদেরকে দেখে ভিড় জমালেও কেউ কথা বলতে বা ক্যামরার সামনে আসতে রাজি হয়নি। তবে দূর থেকে প্রতিবেশিরা বলছিল এখন সবায় আইসেছে। ২৬ তারিখ পার হইলে সারাবছর কারো আর হুদিস (খোঁজ) থাকবে না।
 
২৬ আগস্ট ফুলবাড়ী দিবসকে সামনে রেখে ফুলবাড়ী উপজেলার সর্বত্র চলছে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা। ছাড়া হয়েছে লিফলেট, মাইকে চলছে প্রচার প্রচারণা। কিন্তু এই শহীদ পরিবারগুলোর খবর কেউ রাখেনা। ক্ষোভ-দুঃখ-কষ্ট আর অভিমান নিয়েই আরো একটি ২৬ আগস্ট পার করতে হবে এই শহীদ পরিবারের সদস্যগুলোকে।

# আপনারা সাংবাদিকরা আমার ছেলেকে ভুলে থাকতে দেননা

এমএএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।