শপথ নেয়ার ‘যুক্তি’ দেখালেন সুলতান মনসুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
ফাইল ছবি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সাংসদদের শপথ না নেয়ার পক্ষে জোটপ্রধান ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন মত দিলেও তা মানতে নারাজ ধানের শীষ প্রতীকে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। গণফোরাম সভাপতির আপত্তি সত্ত্বেও শপথ নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক।

এদিকে একই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ‘উদীয়মান সূর্য’ নিয়ে সিলেট-২ আসন থেকে বিজয়ী গণফোরামের একমাত্র প্রার্থী মোকাব্বির খান দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে দলের সিদ্ধান্ত সংসদে না যাওয়ার পক্ষে। সুতরাং দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আর শপথ নিচ্ছি না। যতক্ষণ পর্যন্ত দল ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে না ততক্ষণ শপথ নেব না।’ এর সপ্তাহ খানেক আগে গণফোরামের নির্বাচিত এই প্রার্থী সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন।

অপরদিকে শুক্রবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে শপথের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন প্রবীণ নেতা ও সংবিধান প্রণেতা। তিনি তার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। কিন্তু একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর দলের বর্ধিত সভায় ড. কামাল হোসেন সংসদে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। এখন তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেও আমার নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের কাছে আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে সংসদে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণ শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। জনগণ চান দায়িত্ব পালনে আমি সংসদে যাই। আর আমার দায়িত্বও হচ্ছে নির্বাচনী এলাকার মানুষের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা, তাদের পক্ষে ভূমিকা রাখা এবং আমার রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা ও আদর্শকে যথাযথ কাজে লাগানো। আর এসব বাস্তবায়নের জন্য একজন এমপি হিসেবে আমাকে শপথ নিতে হবে এবং জাতীয় সংসদে যেতে হবে।

কখন শপথ নিচ্ছন এমন প্রশ্নের জবাবে সুলতান মনসুর বলেন, এখন আমি অসুস্থ। একটু সুস্থ হওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শপথ নেব।

তবে মোকাব্বির খান বলেন, শপথ নেয়ার কথা আগে জানিয়েছিলাম দলের শীর্ষ পর্যায়ের মনোভাব বুঝেই। উনি (ড. কামাল) প্রথম দিকে নিজেও বলেছিলেন যে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে উনার মতামত ইতিবাচক। এখন দলের সিদ্ধান্ত না যাওয়ার পক্ষেই কিন্তু এটাও তো স্থায়ী কিছু না। সব ক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্ত মেনেই কাজ করব।

উল্লেখ্য, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের যে দু’জন এবার জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন তাদের শপথ নেয়ার ব্যাপারে গত কিছু দিন ধরেই চলছে জল্পনা কল্পনা। গত ২৮ জানুয়ারি মৌলভীবাজার-২ ও সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান জানান যে তারা শপথ নেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক।

মোকাব্বির খান সেদিন বলেছিলেন, যেহেতু গণফোরামের নির্বাচিত প্রার্থীদের শপথ নেয়ার ব্যাপারে দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, সেক্ষেত্রে আমার অবস্থানও ইতিবাচক। তবে শপথ নেব কি নেব না, ড. কামাল হোসেন দেশে ফিরলে তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।

গণফোরামের এই দুই নেতার দিক থেকে এমন বক্তব্য আসার পর থেকে ঐক্যফ্রন্টের ভেতরের ঐক্য নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। কারণ শুরু থেকেই বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, জোটের কেউ সাংসদ হিসেবে শপথ নেবে না।

বিষয়টি পরিষ্কার করে ড. কামাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পল্টনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, জাতীয় নির্বাচনে আমাদের বিজয়ী প্রার্থীদের কেউই সংসদে যাবেন না। তারা শপথ নেবেন না। প্রধানমন্ত্রীর চা-চক্রের আমন্ত্রণেও ঐক্যফ্রন্ট যাবে না।

ছামির মাহমুদ/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।