‘শিক্ষকদের পা ধরেছি, তারা আমাদের লাথি মেরেছেন’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুর
প্রকাশিত: ০৯:২৬ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

‘হাবিপ্রবির শিক্ষকরা শিক্ষায় নয়, অপরাজনীতিতে চ্যাম্পিয়ন; পা ধরেও তাদের বিবেককে নাড়া দিতে পারিনি; তারা শিক্ষক নয় জল্লাদ, শিক্ষক নয় রাজাকার; আমরা বলি হতে আসিনি, পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছি; রাজনীতির শিকল নিপাত যাক, কলমের কালি মুক্তি পাক; শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি নিপাত যাক, শিক্ষার্থীরা মুক্তি পাক; আদর্শহীন শিক্ষক আর ব্যর্থ প্রশাসন আমাদেরকে জিম্মি করে রেখেছে, হাবিপ্রবিতে ভর্তি আমাদের আজন্ম পাপ।’

এ ধরনের বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে মহাসড়কের ওপর হাঁটু গেড়ে কান ধরে অভিনব প্রতিবাদ জানালো হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। আরেক শিক্ষার্থী ‘শুধু এটাই বাকি’ লিখে বুকে ঝুলিয়ে জম টুপি পরে ফাঁসির রশি হাতে ঝুলিয়ে রাখেন।

Human-chain-of-(1)

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) শিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবিতে মহাসড়কের দুই পাশে হাঁটু গেড়ে কান ধরে অভিনব প্রতিবাদ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় তারা বলেন, আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভুল করেছি। তাই আমরা আজ কান ধরে হাঁটু গেড়ে ক্ষমা চাইছি, আমাদের বাঁচান। এ সময় তারা ভর্তির সময় জমা নেয়া এসএসসি এবং এইচএসসির সনদও ফেরত চান।

Human-chain-of-(4)

বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত দিনাজপুর-ঢাকা সড়কে কান ধরে হাঁটু গেড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের শিক্ষার্থীরা। নভেম্বর থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্য পড়ায় এমন প্রতিবাদ করেছেন তারা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শামীম বলেন, আজকে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি নিরুপায় হয়ে। গত তিন মাস ধরে আমাদের ক্লাস ও পরীক্ষা হচ্ছে না। এজন্য ২৭ জানুয়ারি থেকে কয়েক দফায় মিটিং করেও সমাধান হয়নি। শিক্ষকরা তাদের দাবিতে ছাড় দিতে রাজি না। আমরা শিক্ষকদের কাছে বার বার যাওয়ার পরও তারা আমাদের লাথি মেরে বের করে দিয়েছেন। তারা আমাদের স্বপ্ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। তাদের পা ধরেও ক্লাস-পরীক্ষা নিতে রাজি করাতে পারিনি। আমাদের সমস্যার সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। যাতে আমাদের সমস্যার সমাধান হয়।

Human-chain-of-(5)

আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল মান্নান বলেন, আমাদের এই সমস্যার জন্য আমরা বারবার প্রশাসন ও শিক্ষকদের কাছে গেছি। তারা কোনো সমাধান দিতে পারছেন না। যত বার গেছি, ততবারই লাথি মেরে বিদায় করেছেন। যেখানে আমাদের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে সেখানে আমরা এখনো অনার্স শেষ করতে পারিনি। আমরা চাই দ্রুত সমস্যার সমাধান হোক।

এদিকে, মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষকদের নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনায় বসলেও কোনো সমাধান হয়নি। ফলে বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সফিকুল আলম বলেন, আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি না হওয়ায় সমাধান হয়নি। আলোচনার পথ বন্ধ হয়নি, নতুন করে আলোচনা হবে।

Human-chain-of-(2)

গত ১৪ নভেম্বর থেকে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, সহকারী অধ্যাপকদের লাঞ্ছিত ও নারী শিক্ষিকাদের শ্লীলতাহানির বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার ও ছাত্র উপদেষ্টার বহিষ্কার ও দুই সহকারী অধ্যাপকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছেন নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপকরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামও।

গত আড়াই মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনে থাকায় হাবিপ্রবির অধিকাংশ ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে সৃষ্টি হয়েছে অচল অবস্থা। অনেক শিক্ষার্থী পড়েছেন সেশনজটে।

এমদাদুল হক মিলন/এএম/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।