‘রোহিঙ্গাদের আগ্রহের ওপর নির্ভর করছে প্রত্যাবাসন’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৮:১১ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, নিজ দেশে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হওয়া রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয় পেয়েছে। তবে এখন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সাহায্য সংস্থার মতামত এবং রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছা আগ্রহের ওপর নির্ভর করছে। সবকিছু সমন্বয় করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করবো আমরা।

মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং ক্যাম্প-৪ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পয়োবর্জ্য নিষ্কাশন প্ল্যান্ট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আন্তর্জাতিক শরণার্থী সাহায্য সংস্থা অক্সফাম এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর যৌথভাবে এ পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট বাস্তবায়ন করেছে। চালু হওয়া এ প্ল্যান্ট প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ লোকের পয়োবর্জ্য নিষ্কাশন হবে।

ডা. এনামুর রহমান আরও বলেন, প্রায় সাড়ে এগারো লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্টীকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বীকৃতি পেয়েছেন মাদার অব হিউমিনিটি। প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে থাকবে। এ অবস্থায় স্থানীয় পরিবেশ রক্ষায় পরিকল্পিতভাবে পয়োবর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা জরুরি। বিষয়টি উপলব্ধি করে অক্সফাম এবং ইউএনএইচসিআর সরকারের কাছে জমি চাইলে সরকার এ জমি বরাদ্দ দেয়। আমি বিশ্বাস করি স্বল্প খরচে বিশাল এ প্রকল্পটি পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্প যদি চলমান থাকে তবে দেশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট তৈরি করা যাবে। ভবিষ্যতে সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রকল্প ব্যবহার এবং পরিচালনার জন্য কমিউনিটি সদস্যদের প্রশিক্ষণও দেয়া হবে।

উখিয়া থেকে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসান চরে স্থানান্তর করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে উক্ত স্থানে এক লাখ রোহিঙ্গাদের জন্য শেডও নির্মাণ করা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

coxbazar

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. এনামুর রহমান বলেন, ভারত থেকে যেসব রোহিঙ্গা আসছে তা নিয়ে ভারতের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কথা হয়েছে। এ সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে বলে বিশ্বাস করি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার যেখানে সাড়ে এগারো লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। সেখানে ভারত থেকে আসা কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া কোনো জটিল সমস্যা হবে না।

শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, এ পর্যন্ত ১৬শ রোহিঙ্গা ভারত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। তাদের মধ্যে ৬/৭ শত রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। অন্যন্যদের প্রাথমিক আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।

অক্সফাম ওয়াটার ও স্যানিটেশন প্রকৌশলী সালা উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বের শরণার্থী শিবিরগুলোতে মানুষের পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি চ্যালেঞ্জ। পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রেখে কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এ প্ল্যান্ট বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রতিদিন দেড় লাখ মানুষের গড়ে চল্লিশ কিউবিক মিটার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যাবে। ২০ বছর স্থায়ী এ প্ল্যান্টটির বায়োগ্যাসে স্থানীয়রাও উপকৃত হবেন।

অক্সফামের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর দিপঙ্কর দত্ত বলেন, রোহিঙ্গাদের বর্জ্য এক ধরনের দুর্যোগ। স্থানীয় পরিবেশ রক্ষা করতে বাংলাদেশ সরকারের দেয়া প্রায় আড়াই হাজার একর জমিতে এ প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। প্রাথমিক পর্যায়ে অক্সফামের অধীনে থাকা চারটি ক্যাম্পের বর্জ্য নিষ্কাশন করা হবে। তবে চারটি পয়োবর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট করা হলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ পুরো কক্সবাজারের বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হবে।

প্ল্যান্ট উদ্বোধনকালে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জমান, উখিয়া থানা পুলিশের ওসি আবুল খায়ের, ইউএনএইচসিআরের কক্সবাজারের প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।