সোনামসজিদ বন্দরে ১৪৩ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর সোনামসজিদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ সময়ে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ১৪৩ কোটি ৪১ লাখ ২৪ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এর জন্য দায়ী বলে মনে করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। সমস্যা থেকে উত্তরণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এগিয়ে না এলে আগামীতে আরও রাজস্ব ঘাটতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ভারতের ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা ও মোহদিপুর বন্দরের খুব কাছাকাছি হওয়ায় সোনামসজিদ বন্দর ব্যবসায়ীদের কাছে বেশ পছন্দের। তারা এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর, ফ্লাইএ্যাস, মোটর যন্ত্রাংশ, পোল্ট্রি ফিড, পেঁয়াজ, ফলমূল ও মসলাসহ বেশ কিছু পণ্য আমদানি করেন। অথচ নানা জটিলতায় গত দুবছর ধরে রাজস্ব ঘাটতি নিয়েই চলছে বন্দরটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ৬ মাসে সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩৫ কোটি ২৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা। আর আদায় হয়েছে ৯১ কোটি ৮২ লাখ ২৮ হাজার টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৪৩ কোটি ৪১ লাখ ২৪ হাজার টাকা।
বন্দর ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও বন্দর ব্যবস্থাপনা সংস্থা পানামার অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কারণে বন্দরটি দিন দিন ব্যবসায়ীদের আস্থা হারাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে কমছে রাজস্ব আদায়।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক শফিউর রহমান টানু জানান, বেনাপোলসহ দেশের অন্য বন্দর দিয়ে ফলসহ অধিক শুল্কযুক্ত পণ্যের আমদানি অবাধে হলেও বন্দর দিয়ে বিভিন্ন জটিলতার কারণে এসব পণ্য আমদানি হচ্ছে না।
তারা আরও জানান, স্থলবন্দরের পানামা ইয়ার্ডের অভ্যন্তরে পণ্য ছাড়ের ক্ষেত্রে ত্রুটি ও কাস্টমসের জনবল সংকটের কারণে যথাসময়ে পণ্য ছাড়ে বিলম্ব হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসা উচিত।
আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, দেশের অন্যান্য স্থলবন্দরের মতো সোনামসজিদ স্থলবন্দর পরিচালনা করা হলেও বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে যেসব বৈষম্য রয়েছে, সেগুলো দূর করা হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে।
বেসরকারি বন্দর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পানামা পোর্ট লিংকের প্রতিনিধি মো. রিপন জানান, ইজারা চুক্তি অনুযায়ী পানামা ১৬ হাজার স্কয়ার ফিট ওয়ার হাউস, ৬ হাজার স্কয়ার ফিট প্রশাসনিক ভবন, সাড়ে ৫ হাজার স্কয়ার ফিট সিকিউরিটি ব্যারাক, সাড়ে ৫ হাজার স্কয়ার ফিট ডরমেটরি ভবন, ৫টি ওপেন ইয়ার্ড, ১ নম্বর থেকে ৪ নম্বর গেট পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ আরসিসি ঢালাই রাস্তা নির্মাণ করেছে। আরও ২০ হাজার স্কয়ার ফিটের ওয়ার হাউস নির্মাণের কাজ চলছে। সেই সঙ্গে একটি র্যাকার কেনার জন্য কাজ চলছে। এক কথায় পানামায় ভারতীয় আমদানিকৃত পণ্য প্রবেশ করলেই দ্রুত খালাসসহ গুদামজাতের সুবিধা রয়েছে। পানামার কারণে ব্যবসায়ীরা সোনামসজিদ বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছে এ কথা সঠিক নয়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলতে না চাননি কাস্টমস কর্মকর্তারা। তবে রাজস্ব ঘাটতির পেছনে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি না হওয়াকে দায়ী করেন তারা।
মোহা. আব্দুল্লাহ/এএম/পিআর