একে একে ১৩টি কফিন নিলো পরিবার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ০১:০১ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

কুমিল্লায় কয়লার ট্রাকচাপায় নিহত ১৩ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে নীলফামারী জেলা প্রশাসন। শনিবার সকাল ৮টায় স্বজনদের কাছে মরদেহগুলো হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন। এ সময় প্রত্যেকের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা, ১টি করে কম্বল ও শুকনো খাবার দেয়া হয়।

এর আগে জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের রাজবাড়ী কর্ণময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মরদেহগুলো হস্তান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করে উপজেলা প্রশাসন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজা উদ দৌলা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার সুভাশিষ চাকমা, জেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি আরিফা সুলতানা লাভলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কান্তি ভুষন রায়, শিমুবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হামিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।

চেয়ারম্যান হামিদুল হক জানান, একই স্থান থেকে মীরগঞ্জ ইউনিয়নের মরদেহগুলোও হস্তান্তর করা হয়। সকালে কাভার্ডভ্যানে করে মরদেহগুলো নিয়ে আসা হয়। এখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নিহতের পরিবার বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করবে।

joldhaka

শনিবার সকালে সরেজমিনে ওই তিন গ্রামে গেলে দেখা যায়, এলাকার মানুষগুলো যেন শোকে পাথর হয়ে আছেন। নিহতদের বাড়িতে চলছে আহাজারি, স্বজনদের মাটিতে গড়াগড়ি।

স্বজনরা জানান, ইট ভাটার মালিকের গত বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ৭ দিনের মজুরি দেয়ার কথা ছিল। মজুরি পেয়েই সবাই রাতের বাস ধরে বাড়ি ফিরত। কিন্তু মালিকপক্ষ ওইদিন মজুরি দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে মালিকের কথামতো শুক্রবার বিকেলে টাকা নিয়ে তারা বাড়ি ফিরবে বলে জানায়। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল এই মর্মান্তিক ঘটনা।

নিহত কনক চন্দ্র রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা কনিকা বালা ২ মাস আগে মারা গেছেন। অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছেন। কনকের স্ত্রী ববিতা রানী বাড়ির উঠানে গড়াগড়ি দিচ্ছেন আর চিৎকার করে কাঁদছেন। কনকের এক মেয়ে, এক ছেলে। বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইলে বাবার সঙ্গে দুই ভাই-বোন কথাও বলেছে। বাবার কাছে মেয়ে চেয়েছে স্কুলের খাতা আর ছেলে বলেছে কমলা আনতে। বাবা এলো সত্যিই, তবে কমলা হাতে নয়, কফিনে করে।

রনজিৎ কুমারের স্ত্রী শোভা রানী গগণ বিদারক আহাজারি করে বলছিলেন, স্বামী ৫ মাস ধরে বাড়ি আসেনি। রাতে মোবাইলে জানায় শুক্রবার মজুরির টাকা পেয়ে গাড়িতে চড়বে।

joldhaka

দশম শ্রেণির ছাত্র মনোরঞ্জন রায়। আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে বলে প্রস্তুতি নেয়ার আগে টাকা জোগাড়ে ২২ দিন আগে ছুটে গিয়েছিল কুমিল্লায়। বৃহস্পতিবার রাতে মা ভারতী রানীর সঙ্গে কথা বলেছে। মা অসুস্থ, তাই শুক্রবার মজুরি পেয়ে গাড়িতে উঠবে আর শনিবার মাকে ডাক্তার দেখাবে বলেছিল।

পাড়া-প্রতিবেশীদের যেন এসব আহাজারিতে সান্ত্বনা দেয়ার কোনো ভাষা নেই। তবে গ্রাম থেকে আর কাউকে বিদেশে (জেলার বাইরে) খাটতে যেতে দেয়া হবে না। নিজ এলাকায় কাজ করে যা কামাই হবে তা দিয়েই কষ্টে সংসার চলবে বলে অনেককে মন্তব্য করতে শোনা যায়।

জাহিদুল ইসলাম/এফএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।