ফুলকপির পিস ১ টাকা, বাঁধাকপি ২ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৭:৩৫ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

বগুড়ায় শীতকালীন সবজির ভরা মৌসুমে বাজারে ধস নেমেছে। প্রতিদিনই সবজির দাম কমতে থাকায় কৃষকের উৎপাদন খরচ ওঠা তো দূরের কথা, পড়েছে মাথায় হাত। পানির দরে বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের সবজি।

শনিবার শীতকালীন সবজি ফুলকপি এক টাকা ২৫ পয়সা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি মণ ৫০ টাকা, প্রতি পিস এক থেকে দেড় টাকা। আর বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে মাত্র দুই টাকায়।

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করা সবজির দাম কৃষক না পেলেও কয়েক হাত বদলের মাধ্যমে এই সবজি সাধারণ মানুষকে কিনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি দামে। খুচরা বাজারে এই কপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা।

শনিবার বগুড়ার সবচেয়ে বড় পাইকারি সবজির বাজার মহাস্থান হাট ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়। কৃষকরা জমিতে চাষ করা টাটকা সবজি বিক্রি করতে এসে অনেকটা বাধ্য হয়ে পানির দরে বিক্রি করে বাড়ি ফিরছেন।

মহাস্থান হাটে সবজি বিক্রি করতে আসা মোকামতলা ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের কৃষক জামাল হোসেন, অভিরামপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও চকরামচন্দ্রপুর গ্রামের আব্দুল খালেক বলেন, ফুলকপি এক টাকা ২৫ পয়সা কেজি, বাঁধাকপি দুই টাকা পিস দরে বিক্রি করেছি। এই দামে সবজি বিক্রি করায় চালান তো দূরের কথা ভ্যান ভাড়াও হচ্ছে না। অথচ অনেক টাকা খরচ করে সবজি চাষ করেছি, সে সবজি বাজারে এনে পানির দরে দিয়ে যাচ্ছি। আমরা ন্যায্য দাম না পেলেও খুচরা বাজারে দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এসব সবজি।

মহাস্থান হাটের পাইকারি সবজি ক্রেতা মজনু মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন হাটে ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম পড়ে গেছে। আজ ফুলকপি ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। বাঁধাকপির পিস দুই টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

Bogura-pic

বাঁধাকপি ও ফুলকপির পিস দু’একটা টাকা হওয়ার কারণ জানতে তিনি বলেন, আমদানি বেশি এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সব এলাকায় কপির ফলন ভালো হয়েছে। একসঙ্গে এসব কপি বাজারে আসায় দাম পড়ে গেছে।

লাহিড়িপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুস ছাত্তার কপির দাম পড়ে যাবার কারণ হিসেবে বলেন, বাজারে প্রচুর নতুন আলু উঠেছে। মানুষ সবজি হিসেবে আলু কিনছেন। এ কারণে কপির দাম নেই।

শিবগঞ্জের অনন্তবালা গ্রামের কৃষক আমজাদ বলেন, বাঁধাকপির দাম কম দেখে গরুকে খাওয়ানোর জন্য দুই টাকা করে ৫০ পিস কপি কিনেছি।

মহাস্থান সবজি হাটের ফড়িয়া শাহিনুর ও আমিরুল জানান, তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে সবজি কিনলেও অতিরিক্ত খাজনা, পরিবহন খাতে অধিক ব্যয় ছাড়াও তাদের লভ্যাংশ রাখার কারণে খুচরা বাজারে দুই থেকে তিনগুণ দামে সবজি বিক্রি করতে হয়। মহাস্থান হাট থেকে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ ট্রাক সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয় বলেও জানান তারা।

মহাস্থান হাটের সবজির আড়ৎ মেসার্স সততা বাণিজ্যলয়ের মালিক আব্দুল বারী বলেন, এই অঞ্চলে ব্যাপক সবজি চাষ হয়ে থাকে। এখন ভরা মৌসুম। এ কারণে প্রতিদিন দাম কমছে। কাঁচামাল হওয়ার কারণে অনেক সময় বাধ্য হয়েই পানির দরে সবজি বিক্রি করেন কৃষক।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় পুরো শীত মৌসুমে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হওয়ায় মৌসুমের শেষ পর্যন্ত ৩ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি সবজির ফলন হবে।

লিমন বাসার/এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।