জামাই মেলায় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক কালীগঞ্জ, গাজীপুর
প্রকাশিত: ০১:৫৪ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯

মূলত এটা মাছের মেলা। কিন্তু সবাই এটাকে বলেন জামাই মেলা। বলছিলাম গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামের মাছের মেলার কথা। আর এই দিনটিকে ঘিরেই এখানে দিনব্যাপী চলে আনন্দ-উৎসব। দিনটির জন্য সারাবছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসী। 

এক টিকিটে দুই ছবি বলাটা খুব বেশি অযৌক্তিক হবে না। কারণ এটা মাছের মেলা হলেও, এখানে চলে এলাকার জামাইয়ের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা। বিনিরাইল এবং এর আশপাশে গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সেসব জামাই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনার্থী। 

মেলা ঘিরে এলাকার শ্বশুরদের মধ্যেও চলে এক নীরব প্রতিযোগিতা। কোন শ্বশুর সবচেয়ে বড় মাছটি দিয়ে জামাই আপ্যায়ন করতে পারে। আবার জামাইরাও চান কত বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি যেতে পারেন। বিনিরাইলের মাছের মেলা যেন জামাই-শ্বশুরের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতার মাঠ। 

Picture-(4)

৪০ কেজি ওজনের একটা মাছ ঘিরে ক্রেতাদের জটলা। মাছের নাম কাতল। বিক্রেতা দাম হেঁকেছেন ৬৫ হাজার টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় চুপাইর এলাকার জামাই নুরুল ইসলাম মাছটির দাম সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা বলছেন। কিন্তু বিক্রেতা আরো বেশি দামের আশায় মাছটি ছাড়ছেন না। চলছে দর কষাকষি। যতনা ক্রেতা তার চেয়ে বেশি উৎসুক জনতা। 

উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তো এসেছেনই। এর বাইরে থেকেও অনেকে এসেছেন উপজেলার সর্ববৃহৎ এই মাছের মেলায়। গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেছেন। প্রতি বছর পৌষ-সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। এবারের মেলায় প্রায় ৩ শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বলে আয়োজক সূত্রে জানা গেছে। 

মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও বসেছে। মাছের মেলায় সামুদ্রিক চিতল, বাঘাড়, আইড়, বোয়াল, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশি মাছও। 

বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম নুরু জানান, এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫০ বছর যাবৎ মেলাটির আয়োজন করে আসছেন এলাকার মুরুব্বিরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। 

Picture-(5)

মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন শেখ জানান, বৃটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত।

জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর গ্রামের জামাই নুরুল ইসলাম বলেন, শ্বশুরবাড়িতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা। তাই এলাকার সকল জামাইদের নজর বিনিরাইলের মাছের মেলার বড় মাছটার দিকেই। স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন। সেই অনুযায়ী মাছের দামও হাঁকানো হয়।
তিনি আরো জানান, শুরুতে এ মেলা শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও, বর্তমানে এটা সকল ধর্মের মানুষের কাছে ঐতিহ্যের উৎসবে পরিণত হয়েছে।    

ঐতিহ্যবাহী এ মেলা সম্পর্কে জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ফারুক মাস্টার জানান, মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যতই হোক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে।

আব্দুর রহমান আরমান/এফএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।