মানুষ উঠলেই দুলতে থাকে সেতুটি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বাগেরহাট
প্রকাশিত: ০৬:৫৯ এএম, ১১ জানুয়ারি ২০১৯

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্র রায়েন্দা বাজারের রায়েন্দা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সেতুটির লোহার পিলারগুলোর অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষ উঠলেই সেতুটি দুলতে শুরু করে।

প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়ে দুই পারের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা চলাচল করলেও তা সংস্কার বা নতুন সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই। যে কোনো মুহূর্তে সেতুটি ধসে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

শরণখোলা উপজেলা সদরে খরস্রোতা নদীর ওপর ১৯৯৭ সালে এলজিইডির একটি প্রকল্পের মাত্র ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে লোহার কাঠামো এবং ওপরে আরসিসি ঢালাইয়ে নির্মিত হয় এই সেতুটি। এরপর দীর্ঘ ২১ বছরেও এটি মেরামত করা হয়নি। সেতুটির দক্ষিণ পারে উপজেলার প্রধান শহর রায়েন্দা বাজার। এখানে রয়েছে রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাইস্কুল, আরকেডিএস বালিকা বিদ্যালয়, রায়েন্দা মডল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আইডিয়াল ইনস্টিটিউট, ভাসানী কিন্ডার গার্টেন স্কুল এবং রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, থানা, পোস্ট অফিস, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, সরকারি খাদ্য গুদাম, চারটি ব্যাংকসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

অপরদিকে উত্তর প্রান্তে খোন্তাকাটা ইউনিয়ন। এখানে রয়েছে শরণখোলা সরকারি কলেজ, রায়েন্দা-রাজৈর ফাজিল মাদরাসা, চারটি বরফ কলসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থীসহ কর্মজীবীরা প্রতিদিন নড়বড়ে এই সেতু দিয়েই যাওয়া-আসা করে থাকেন। তাছাড়া সেতুর নিচ থেকে খাদ্য গুদামের বর্জ্য, কার্গো জাহাজ, শত শত ফিশিং বোট ও অন্যান্য নৌযান চলাচল করতে গিয়ে ধাক্কা লেগে সেতুর লোহার কাঠামো ভেঙে এলোমেলো হয়ে গেছে। ক্ষয় হয়ে গেছে অধিকাংশ পিলারের গোড়া। সেতুটি এখন পরিত্যাক্ত সেতুতে পরিণত হয়েছে।

রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান আহমেদ গাজী ও রায়েন্দা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাইয়েদুল হক জানান, সেতুটির বর্তমান যে অবস্থা তাতে ছেলে-মেয়েরা পার হতে ভয় পায়। লোকজন উঠলেই সেতুটি দুলতে থাকে। তাই জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি দ্রুত মেরামত বা নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন ও খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বলেন, খরস্রোতা এই রায়েন্দা নদী খেয়ার নৌকায় পার হতে গিয়ে নৌকা ডুবে বহু দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে নদীর ওপর এ সেতুটি দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের মধ্যে এক সেতুবন্ধন তৈরিসহ পারাপার অনেক সহজ করে দিয়েছে। সেতুটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কোনো সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে বহুবার উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা করেও কোনো কাজ হয়নি।

শরণখোলা উপজেলা প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, এই সেতু এবং সেতুর দুই পারের সড়ক আমাদের এলজিইডির আইডি তালিকাভুক্ত না। সে কারণে এখানে কোনো বরাদ্দ দেয়া যাচ্ছে না। এডিবি প্রকল্প ছাড়া আমাদের এটি মেরামতের সুযোগ নেই। সেতুটি এখন মেরামতের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সে কারণে ঢালাই দিয়ে নতুন করে সেতু নির্মাণ দরকার।

শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন বলেন, সেতুর বর্তমান যে অবস্থা তাতে নতুন করে আরসিসি পিলার না দিলে কোনো লাভ হবে না। তাই উপর মহলে যোগাযোগ করে বড় কোনো বরাদ্দ আনা যায় কি-না সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।

শওকত বাবু/আরএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।