মানবতার হাসপাতালে অমানবিক কাণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল
প্রকাশিত: ১০:০৭ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৯

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কুড়ুলিয়া গ্রামের শারমিন বেগম (২৫) নামের এক গৃহবধূর রক্তের গ্রুপ এক দিনের মধ্যে বদলে গেছে।

বাস্তবে এ ঘটনা না ঘটলেও হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষায় ওই গৃহবধূর দুই রকম রিপোর্ট পাওয়া গেছে। শারমিন বেগম উজিরপু উপজেলার কুড়ুলিয়া গ্রামের হানিফ খলিফার স্ত্রী।

শারমিন বেগমের স্বজনরা জানান, প্রসব বেদনা নিয়ে ৫ জানুয়ারি আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের বাইপাস মোড়ের ফুল্লশ্রী এলাকায় দুস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতালে আসেন শারমিন।

হাসপাতালের চিকিৎসক মো. আশ্রাফুল ইসলাম শাওন শারমিনকে ভর্তি করিয়ে ওই রাতেই অস্ত্রোপচারের কথা বলেন। অস্ত্রোপচার করতে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ১১ হাজার টাকার চুক্তি হয়।

ওই রাতেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শারমিন দ্বিতীয় ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। এরপর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে চিকিৎসক তাকে রক্ত নেয়ার পরামর্শ দেন। ওই হাসপাতালের প্যাথলজিতে তার রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়।

হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নয়ন হালদার রোগীর রক্তের গ্রপ ‘এ পজিটিভ’ নির্ণয় করে রিপোর্ট দেন। একই সঙ্গে রোগীর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই একাধিক রিপোর্টের ফল দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেন নয়ন।

তবে রক্তের গ্রুপ নিয়ে শারমিন বেগমের পরিবারের মধ্যে সন্দেহ হলে আগৈলঝাড়ার পার্শ্ববর্তী উপজেলা গৌরনদীর সিকদার ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান।

সেখানে শারমিন বেগমের রক্তের গ্রুপ বদলে যায়। ফল আসে ‘বি পজিটিভ’। দুই হাসপাতালের দুই রকম রিপোর্টে শারমিন বেগমের স্বজনরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। তাকে রক্ত দেয়া বিলম্ব থেকে থাকে।

এ অবস্থায় আরেকটি প্যাথলজিতে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন তার রক্তের গ্রুপ ‘বি পজিটিভ’। তখন ‘বি পজিটিভ’ রক্ত শারমিনকে দেয়া হয়। এরই মধ্যে দুস্থ মানবতার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের এ ঘটনা নিয়ে বাগবিতণ্ডা লেগে যায়।

এ ব্যাপারে দুস্থ মানবতার হাসপাতালের পরিচালক ও স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক ডা. হিরন্ময় হালদার বলেন, ঘটনাটি নিয়ে রোগী ও তার স্বজনদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চিকিৎসক আশ্রাফুল কোনো রোগী ভর্তি করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হিরন্ময় হালদার বলেন, এটা তিনি পারেন না। এ জন্য তাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

ওই হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে এই টেস্ট হয় না। তবে কিভাবে এইচআইভি টেস্ট রিপোর্ট দেয়া হয়েছে; জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন মো. মানোয়ার হোসেন বলেন, রোগীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে অবশ্যই এ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এভাবে ভুল রিপোর্ট ও ভুল চিকিৎসার কারণে আর কোনো রোগীর যেন ক্ষতি না হয়; সেজন্য ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করব আমি।

সাইফ আমীন/এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।