স্বাধীনতার পর এই প্রথম মন্ত্রী পেল না সিরাজগঞ্জ
স্বাধীনতার পর থেকে এই প্রথম মন্ত্রিহীন হয়ে পড়ল জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর জন্মভূমি সিরাজগঞ্জ। এবার মন্ত্রী পরিষদে নাম নেই জেলার কোনো সংসদ সদস্যের।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৬টি আসনে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। কিন্তু রোববার অন্যান্য জেলার এমপিদের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হলেও সিরাজগঞ্জের কোনো এমপির নাম ঘোষণায় আসেনি। এতে হতাশ সিরাজগঞ্জবাসী। কারণ ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকার, ১৯৭২ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে সদ্য বিদায়ী সরকারেও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ৯ শীর্ষ প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তি। সর্বশেষ ২০১৪ সালেও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ নাসিম।
জানা গেছে, ১৯৭১-র ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুরের আমবাগানে (মুজিব নগর) গঠিত প্রবাসী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী পরিষদে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী। স্বাধীনতা যুদ্ধের ৯ মাসে প্রবাসী সরকারের মন্ত্রী, অন্যতম নেতা ও সংগঠকের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন তিনি। ১৬ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রীসভায় ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী প্রথমে যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দ্রুত উন্নত করার ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেন।
পরবর্তীতে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় বেলকুচি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন তালুকদারও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জিয়াউর রহমানের আমলেও মন্ত্রীত্ব পান অধ্যাপক ডা. এম.এ. মতিন। ১৯৭৮ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, যুব উন্নয়ন, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন, বাণিজ্য, যোগাযোগ, পূর্ত এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ৯টি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৯ সালের ১৩ই আগস্ট পর্যন্ত তিনি উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে সিরাজগঞ্জ-৬ (চৌহালী) আসন থেকে আলহাজ্ব আনছার আলী সিদ্দিকী পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মোহাম্মদ নাসিম স্বরাষ্ট্র, ডাক, তার-টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সরকারের সময় সিরাজগঞ্জ-৫ (শাহজাদপুর) আসনে হাসিবুর রহমান স্বপন শিল্প-উপমন্ত্রী, ২০০১ সালে চারদলীয় জোটে সরকারের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী হিসেব দায়িত্ব পালন করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
২০০৮ সালে আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ বিশ্বাস মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা হন এইচ.টি ইমাম। আর ২০১৪ সালে মহাজোট সরকার টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ নাসিম।
অথচ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৬টি আসনে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। বিপুল বিজয়ের পুরস্কার হিসেবে অন্তত একজন মন্ত্রীত্ব পাবেন এমনটাই আশা ছিল নেতাকর্মীসহ সিরাজগঞ্জবাসীর। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে টেলিভিশনে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের নামের তালিকা দেখে।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এফএ/পিআর