এমন শোকের মিছিল আগে দেখেনি কেউ
এ যেন অবিশ্বাস্য দৃশ্য! নিজের চোখে না দেখলে সত্যিই বিশ্বাস করা কঠিন। একজন রাজনীতিক নিজ এলাকায় কতোটা জনপ্রিয় হতে পারেন, শেষ যাত্রায় লাখো মানুষের ঢলই তার প্রমাণ।
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে জনপ্রিয় নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ আসে দুপুর ১টার কিছু আগে। এর আগে সকাল থেকে দলে দলে লোকজন আসতে থাকেন শোলাকিয়ায়। দুপুরের আগেই বিশাল শোলাকিয়া ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বাইরে তখনও মানুষের দীর্ঘ লাইন। একসময় মাঠের সীমানা পেরিয়ে আশপাশ লোকারণ্য হয়ে ওঠে।
জানাজার নামাজ শুরু হয় দুপুর দেড়টায়। নামাজ পড়ান শহরের পাগলা মসজিদের খতিব মাওলানা খলিলুর রহমান। এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের এমপি নাজমুল হাসান পাপন, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের এমপি এম আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সহকারী কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন, জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের একমাত্র মেয়ে সৈয়দা রীমা ইসলাম, তিন ভাই মেজর জেনারেল সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম, ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, ড. সৈয়দ শরীফুল ইসলাম, দুই বোন সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, সৈয়দা রাফিয়া নূর রুপাসহ পরিবারের সদস্য এবং বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন।
এর আগে দুপুর পৌনে ১টার দিকে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়ামে আনা হয়। সেখানে জাতীয় পতাকা মোড়ানো কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা।
সেখান থেকে মরদেহবাহী গাড়ির বহর পৌঁছে শোলাকিয়া মাঠে। সেখানে নামাজে জানাজা শেষে শোকাবহ পরিবেশে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানায় কিশোরগঞ্জবাসী।
৬৭ বছর বয়সী সৈয়দ আশরাফ ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কয়েক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয় তার।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ জনপ্রশাসনমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
হাসপাতালে থেকেই তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ নৌকার প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এর আগে, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আওয়ামী লীগ নেতা, জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাসহ সর্বস্তরের মানুষ জানাজায় অংশ নেন। নামাজে জানাজা শেষে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজার নামাজ পরিচালনা করেন সংসদ ভবন মসজিদের ইমাম ক্বারি মো. আবু রায়হান। প্রথম জানাজার মাধ্যমে জাতীয় সংসদ থেকে আশরাফুল ইসলামকে চিরবিদায় জানানো হয়।
জানাজার পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৈয়দ আশরাফের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর তাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এ সময় বিউগলের করুণ সুর বেজে ওঠে। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে মরহুমের মরদেহে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। তার বিদেহী আত্নার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
পরে হেলিকপ্টারে করে আশরাফের মরদেহ নেয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ পুরনো স্টেডিয়াম মাঠে দ্বিতীয় জানাজা এবং বেলা ২টায় ময়মনসিংহ আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে তৃতীয় জানাজা শেষে তার মরদেহ আবারও ঢাকায় আনা হচ্ছে। বাদ আসর রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
নূর মোহাম্মদ/এমএআর/পিআর/এসজি