হীরার টুকরাকে মন্ত্রী দেখতে চান নড়াইলবাসী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নড়াইল
প্রকাশিত: ০৯:১৮ পিএম, ০২ জানুয়ারি ২০১৯

নড়াইল-২ (লোহাগড়া-সদরের একাংশ) আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের সদ্য নির্বাচিত সদস্য বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান নড়াইলবাসী।

রাজনীতির মাঠে নেমেই বিশাল ছক্কা মারলেন এবং জয় ছিনিয়ে নিলেন নড়াইল এক্সপ্রেসখ্যাত মাশরাফি। খেলোয়াড় থেকে রাজনীতিক মাশরাফি এখন দেশসেবার জন্য প্রস্তুত।

অবশ্য মাশরাফির নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হীরার টুকরা উপাধি দিয়ে ভোট চেয়েছেন। ফলে তাকে বিপুল ভোট দিয়ে জয়ী করেছেন ভোটাররা। এবার তাকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছেন নড়াইলবাসী। তাদের প্রত্যাশা, মাশরাফিকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তারুণ্যের প্রতীক মাশরাফি মন্ত্রী হয়ে দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করতে পারবেন।

Narail-Masrafi

নড়াইল-২ আসন থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাশরাফি। নড়াইলের ইতিহাসে এত বেশি ব্যবধানে বিজয় আর কেউ পাননি। পাহাড় সমান বাধা ডিঙিয়ে এবং শরীর পুরোপুরি ফিট না থাকা সত্ত্বেও গত ২১ ডিসেম্বর নড়াইলে এসে এক সপ্তাহের বেশি নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়ান মাশরাফি।

নির্বাচনী প্রচারে মাশরাফির সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী সুমনা হক সুমি। করেছেন দেড় শতাধিক পথসভা ও উঠান বৈঠক। জয় করেছেন লাখো মানুষের মন। এই তরুণের জন্য যেখানেই ভোট চাইতে গেছেন সেখানেই ছিল অসংখ্য তরুণ-তরুণীর ভিড়। ভোটাররা যখন খবর পেয়েছেন, মাশরাফি এই পথ দিয়ে আসবেন তখন থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনেছেন। মাশরাফিকে এক নজর দেখতে অপেক্ষায় ছিলেন হাজার হাজার মনুষ।

Narail-Masrafi

যেখানে লাখ লাখ টাকা খরচ করলেও কর্মী খুঁজে পাওয়া যায় না, সেখানে মাশরাফির বেলায় ছিল ভিন্ন চিত্র। দেশের প্রায় ২০টি জেলা থেকে ৩ শতাধিক তরুণ মাশরাফি ভক্ত নড়াইলে এসেছেন এবং নিজ খরচে ম্যাশের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।

তারুণ্যের স্রোতে একাকার হয়ে যান ম্যাশ। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ছাড়াও তরুণ সমাজ, সাধারণ ভোটার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণিপেশার মানুষ তার জন্য ভোট প্রার্থনা করেছেন। বিষয়টি এমন স্লোগান হয়ে যায়, ‘দল যার যার, মাশরাফি সবার’। ভোটের মাঠেও তার প্রতিফলন দেখা যায়। আকাশসম জয় পান মাশরাফি।

বিজয়ের মালা গলায় পরে মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও খেলাধুলার উন্নয়নে কাজ করব আমি।

Narail-Masrafi

নড়াইলের মানুষের কাছে এখন এক আস্থার নাম মাশরাফি। ইতোমধ্যে তা কিছুটা হলেও প্রমাণ করেছেন তিনি। ২০১৭ সালে নড়াইলে তার নেতৃত্বে ‘নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী ও জনকল্যাণমূলক সংগঠন গড়ে তোলা হয়। যেটি এখনো অব্যাহত।

তার জনকল্যাণমূলক কাজের মধ্যে রয়েছে- দুস্থ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার জন্য আর্থিক সাহায্য, কম খরচে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন থায়রো কেয়ার বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির প্যাথলজিক্যাল টেস্ট কার্যক্রম, শহরের দুটি পয়েন্টে ফ্রি-ওয়াইফাই ব্যবস্থা চালু, তৃণমূল পর্যায় থেকে ক্রিকেট, ফুটবল ও ভলিবল খেলোয়াড় অন্বেষণ ও বাছাই করে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, শহরে অত্যাধুনিক একটি জিম নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু, গ্রিন ও ক্লিন নড়াইল করতে শহর ও লোহাগড়া পৌরসভার বিভিন্ন পয়েন্টে ১২০টি ডাস্টবিন স্থাপন, জেলার ১ হাজার কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে ধানের বীজ বিতরণ এবং নড়াইল শহর এবং লোহাগড়া পৌর এলাকার ২৫টি পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা স্থাপন।

Narail-Masrafi

এসব সেবামূলক কাজের কারণে মাশরাফির জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। পাশাপাশি এখানকার রাজীতিবিদ, সাধারণ মানুষ এবং তরুণদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক।

নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি তরিকুল ইসলাম অনিক বলেন, ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খেলাধুলা, কৃষি, পরিবেশসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাশরাফি বিন মর্তুজা এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এখন এসব উন্নয়ন আরও সক্রিয় ও দৃশ্যমান হবে। আমি চাই মাশরাফি ভাই মন্ত্রী হোক।

Narail-Masrafi

নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়াও দলমত নির্বিশেষে মানুষ মাশরাফিকে ভালোবেসে এবং প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের সঙ্গে একাত্ম হয়ে নৌকায় ভোট দিয়েছেন। নড়াইলের উন্নয়নে মাশরাফি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তাকে যদি মন্ত্রী করেন তাহলে অবহেলিত এই জনপদে ব্যাপক উন্নয়ন হবে।

হাফিজুল নিলু/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।