দু’যুগ ধরে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী তারা
টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনে গত দুই যুগ ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী অপরিবর্তিত রয়েছে। মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশু বিষয়ক সম্পাদক ও মির্জাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী গত পাঁচ নির্বাচনে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়ে যাচ্ছেন।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী প্রথমবারের মতো এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর ১২ জুন সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসীন হল ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস সাঈদ সোহরাবকে দেয়া হলেও পরে তাকে বাদ দিয়ে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়। তিনিই বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. একাব্বর হোসেনকে প্রায় ৬ হাজার ভোটে পরাজিত করেন। তারপর থেকেই দলে তার একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে আর আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সম্প্রতি তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেয়ে দলের নীতি নির্ধারকের পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন।
তবে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী ২০০১ সালে প্রায় ২ হাজার ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে একাব্বর হোসেনের কাছে প্রায় ৪২ হাজার ভোটে পরাজিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি বিএনপির মনোনিত প্রার্থী ছিলেন। অবশ্য বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করে। এ কারণে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. একাব্বর হোসেনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন।
এদিকে ২০০১ সালে সারা দেশে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির সময় একাব্বর হোসেন এমপি নির্বাচিত হওয়ায় দলে তার ভাবমূর্তি উজ্জল হয়ে ওঠে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিসহ মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদ, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য টাঙ্গাইল জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লি. এর সভাপতি খান আহমেদ শুভ, সালমা সালাম উর্মি, মেজর (অব) খন্দকার এ হাফিজ ও মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ওয়াহিদ ইকবাল দলের মনোনয়ন চান। এদের মধ্যে উপজেলার সর্বত্র মো. একাব্বর হোসেন ও খান আহমেদ শুভ আলোচনায় থাকলেও তরুন প্রার্থী হওয়ায় শুভ দলীয় মনোনয়ন পাননি।
অপরদিকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হল ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস সাইদুর রহমান সাঈদ সোহরাব, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি নেতা ও জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ হায়দার খান, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও মির্জাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শিল্পপতি একেএম আজাদ স্বাধীন ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদেক আহমেদ খান দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করে জমা দেন। এদের মধ্যে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী ও সাঈদ সোহরাবকে দলীয় চিঠি দেয়া হলেও চূড়ান্ত চিঠি পান আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী।
প্রায় দুই যুগ ধরে পাঁচটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাব্বর হোসেন তিনবার এবং বিএনপির আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরাবরের মতোই এ দুজন নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একাব্বর হোসেন টানা চারবার এবং আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তবে কার স্বপ্ন পূরণ হয় সেটা এখন নির্ভর করছে মির্জাপুরবাসীর ওপর।
১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসন। এ আসনে ৩ লাখ ২২ হাজার ৬৭৩ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে নারী ১ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৫ জন এবং পুরুষ ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৮ জন।
এরশাদ/এফএ/এমকেএইচ