কুড়িগ্রাম-২ আসনে সাবেক দুই আওয়ামী লীগ নেতার লড়াই

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ১০:৩২ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৮

কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দুই নেতা এবার মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একই দলের সাবেক দুই নেতা ভিন্ন দলের প্রার্থী হয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামায় হতাশ তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বৃহৎ দুই দলের নেতাকর্মীদের মাঝেও দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।কেন্দ্রীয়ভাবে দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে ‘ভাড়াটিয়া প্রার্থী’ দেয়ায় জেলার উন্নয়ন বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় করছেন তারা।

কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ি এবং রাজারহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-২ আসন। এই আসন থেকে প্রতিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দু’দলের ‘ভাড়াটিয়া প্রার্থী’ মনোনয়ন পান। এতে প্রতিবারই বঞ্চিত হন জেলার ত্যাগী নেতারা। ব্যতিক্রম ঘটেনি এবারও। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেজর জেনারেল আ ম সা আ আমিন (অব.) গণফোরামে যোগ দিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষে নির্বাচন করছেন। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগ বহিস্কৃত নেতা সাবেক সহ-সভাপতি পনির উদ্দিন আহমেদ মহাজোটের জাতীয় পার্টি হয়ে নির্বাচন করছেন।

পনির উদ্দিন আহমেদ জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত হন। জাতীয় পার্টি দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করলেও ২০১৪ সালে মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। অন্যদিকে আ ম সা আ আমিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। পরে জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে থাকাকালিন জেলা আওয়ামী লীগকে দ্বি-খন্ডিত করার অভিযোগে সভাপতির পদ হারান। এরপর থেকে জেলার রাজনীতি থেকে নির্বাসনে যান তিনি।

বিএনপি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বহিরাগতরাই এসে এই আসনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এবারও ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বহিরাগত প্রার্থীকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে জেলা বিএনপি। বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ কুশপুত্তলিকা দাহ কর্মসূচি পালন করেছে। অন্যদিকে মনোনয়নে নিজেদের প্রার্থী না পাওয়ায় আন্দোলনে নেমেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও। জোটগত কারণে বারবার জেলার ত্যাগী নেতাদের সাথে কেন্দ্রের এমন আচরণে হতাশ তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

কুড়িগ্রাম-২ আসনে ১৯৭৯ সালে প্রয়াত তাজুল ইসলাম চৌধুরী বিএনপি থেকে প্রথম নির্বাচিত হন। পরে ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টি হয়ে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে আবারও বিএনপিতে যোগ দিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। পরে আবার দল পরিবর্তন করে জাতীয় পার্টির হয়ে ২০১৪ সালে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন প্রয়াত এ নেতা।

এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক রুবেল আহমেদ জানান, আমরা যারা দল করি তারা ধানের শীষে ভোট দেব। কিন্তু নীতিহীন আ ম সা আ আমিনকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়ায় তিনি কর্মী শূন্যতায় ভুগবেন। এবারে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সোহেল হোসনাইনকে কায়কোবাদকে প্রার্থী করা হলে বিপুল ভোটে জয়লাভ হত। সঠিক প্রার্থী না থাকায় সর্ব স্তরের মানুষও হতাশ। ফলে মহাজোটের প্রার্থী অনায়সে জয়লাভ করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আমিমুল ইসলাম জানান, প্রার্থী না পাওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা হতাশ। আগামীতে মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে অন্ধকার নেমে আসবে শুধুমাত্র বহিরাগত প্রার্থী দেওয়ার জন্য।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওয়াহেদুন্নবী সাগর বলেন, দলের নিবেদিত প্রাণ নেতা প্রার্থী না হওয়ায় তরুণ সমাজের মাঝে এক ধরনের সংশয় কাজ করবে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, আ ম সা আ আমিন সভাপতি থাকার সময় জেলা আওয়ামী লীগকে দ্বিখন্ডিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু সকলের ঐক্য প্রচেষ্ঠায় তা হয়নি। উল্টো তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি থেকে বনবাসে ছিলেন। কিন্তু এবার স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে আতাত করে ধানের শীষে ভোট করছেন। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে জেলার রাজনীতিতে বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে পারে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল বলেন, দেশ ও দলের স্বার্থে জেলা আওয়ামী লীগ সব বিভেদ ভুলে এক সাথে কাজ করবে।

আরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।