মৌসুমী ব্যবসায়ী থেকে কোটিপতি এমপি ওদুদ
মৌসুমী ব্যবসায়ী থেকে কোটিপতি বনে গেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ। গত এক দশকে তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ। নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুল ওদুদের দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এর মধ্যে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে প্রথমবার নির্বাচিত হন আবদুল ওদুদ। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন দশম সংসদ নির্বাচনে। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই আসনে নৌকার প্রার্থী তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা আবদুল ওদুদ উচ্চ মাধ্যমিক পাস। এমপি নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি জেলা সদরের মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। চেয়ারম্যান পদে আরেকবার অংশ নিয়ে হেরে যান তিনি। আওয়ামী লীগে আসার আগ পর্যন্ত তিনি জেলা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি ছিলেন। তবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার নৌকার টিকেট পেয়ে নির্বাচিত হন ওদুদ।
তিন নির্বাচনে তার হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নবম সংসদ নির্বাচনের আগে আবদুল ওদুদের নিজের নামে পৈত্রিক কৃষিজমি ছিল ৩০ বিঘা। যার অর্জনকালীন মূল্য মাত্র ৯ লাখ টাকা। ওই সময় স্ত্রীর নামে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ৬ বিঘা কৃষিজমি দেখিয়েছেন তিনি। দশম সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তা দেখিয়েছেন অভিন্ন। এবার এসে তার নিজের নামে ১৭ বিঘা বেড়ে কৃষিজমি দাঁড়িয়েছে ৪৭ বিঘা। পৈত্রিক ও ক্রয়সূত্রে পাওয়া এই জমির অর্জনকালীন মূল্য তিনি দেখিয়েছেন ২৫ লাখ টাকা।
তবে কৃষিখাত থেকে তুলনামূলক আয় বাড়েনি ওদুদের। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে এই খাত থেকে তার আয় ছিল এক লাখ টাকা। আর নির্ভরশীলদের আয় ৪০ হাজার টাকা। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে এ খাত থেকে নির্ভরশীলদের আয় না দেখালেও তিনি নিজের আয় দেখিয়েছেন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা।
এক দশকে অকৃষি জমিও বেড়েছে আবদুল ওদুদ এমপির। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি নিজের নামে এ এক লাখ টাকা মূল্যের ১০ বিঘা অকৃষি জমি দেখিয়েছিলেন। যার পুরোটাই দেখিয়েছেন পৈত্রিক হিসেবে। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে অকৃষি জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তার ১১ দশমিক ২৫ বিঘা। আগেরবার এই জমির পুরোটাই পৈত্রিক দেখালেও পরেরবার তা দেখাননি।
এবার আবদুল ওদুদ নিজের নামে ৮৯ লাখ টাকা অর্জনকালীন মূল্য উল্লেখ করে অকৃষিজমি দেখিয়েছেন ৬৮ বিঘা। যার পুরোটাই পৈত্রিক ও ক্রয়সূত্রে পাওয়া বলে উল্লেখ করেছেন। তিন হলফনামায় স্ত্রী কিংবা নির্ভরশীলদের নামে কোনো অকৃষি জমি দেখাননি ওদুদ।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে আবদুল ওদুদের নিজের নামে কোনো আবাসিক বা বাণিজ্যিক দালান দেখাননি। কেবল আড়াই লাখ টাকা মূল্যের যৌথ মালিকানায় এক বিঘা বাড়ি দেখিয়েছেন। দশম নির্বাচনের আগে এসে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে ৪৮ লাখ টাকা মূল্যের চারটি আবাসিক বা বাণিজ্যিক দালান।
এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে তিনটি এবং রাজশাহী শহরে একটি আবাসিক বা বাণিজ্যিক দালান দেখিয়েছেন। যার অর্জনকালীর মূল্য মাত্র ২ লাখ। এবার তার যৌথ মালিকানায় থাকা এক বিঘা বাড়ি দেখানো হয়নি।
এক দশক আগেও বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট এবং ফ্ল্যাট ছিল না আবদুল ওদুদের নামে। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে তার নামে যুক্ত হয় রাজশাহী নগরীতে ২০ লাখ টাকা মূল্যের একটি বাড়ি। এছাড়া হলফনামায় ২৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা মূল্যের আরও দুটি ফ্ল্যাটের মালিকানা দেখানো হলেও সেটির অবস্থান উল্লেখ নেই।
এবার তিনি চারটি বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট দেখিয়েছেন নিজের নামে। এগুলোর অবস্থান উল্লেখ না থাকলেও মূল্য দেখানো হয়েছে এক কোটি ৯১ লাখ ৮ হাজার টাকা। নতুন করে যুক্ত হয়েছে ২০ লাখ টাকা মূল্যের একটি ফিলিং স্টেশন। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে এক লাখ টাকা মূল্যের একটি পিস্তল যুক্ত হয়েছে তার নামে। এবারও সেটিই দেখিয়েছেন।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে মৌসুমি ব্যবসা করতেন আবদুল ওদুদ। সেই থেকে তার বছরে আয় ছিল ৪০ হাজার টাকা। দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বছরে আয় দেখিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। আর এবার ব্যবসা থেকে আয় দেখিয়েছেন দেড় লাখ টাকা। পেশা মৌসুমি ব্যবসায়ী থেকে হয়েছে ব্যবসায়ী।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে এ পর্যন্ত আবদুল ওদুদের নিজের মালিকানায় রয়েছে ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। যা দেখিয়েছেন বিবাহের দান হিসেবে। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে দান ও উপহার হিসেবে স্ত্রীর নামে ৫০ ভরি এবং দুই কণ্যার নামে ৪৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার দেখিয়েছেন। দশম সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দুই মেয়ের নামে স্বর্ণালঙ্কার পরিমাণ একই ছিল। এখন স্ত্রীর নামে ৫০ ভরি এবং দুই মেয়ের নামে নামে ১২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার দেখিয়েছেন এমপি আবদুল ওদুদ।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর/এমএস