বলতে লজ্জা লাগে, এমপি আমাকে চেনেন না
গত দুই মেয়াদে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনে ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রার্থী তিনি।
কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করার অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে শনিবার দুপুরে ১৪ দলের বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের কাঠগড়ায় দাঁড়ান বাদশা।
রাজশাহী সিটি মেয়র ও ১৪ দলের সমন্বয়কারী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়াও জোটের অন্যান্য শরিক দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।
সভা পরিচালনা করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। ফজলে হোসেন বাদশাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি দু-দুই বারের এমপি। আপনি অনেক কাজ করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও আপনি কখনো ভুল স্বীকার করেননি। আপনি ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা হলেও আওয়ামী লীগের এমপি। ভোট দেব, পাস করাবো, এরপর চলে যাবেন। এবার এ চিন্তা থাকলে আপনাকে খেসারত দিতে হবে।
রাজশাহী কলেজে নির্মাণাধীন ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রসঙ্গ টেনে ডাবলু সরকার বলেন, এ শহীদ মিনারের ভিত্তি স্থাপনে আওয়ামী লীগের একজন নেতাকর্মীকেও ডাকেননি। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিতা কাটেন। কিন্তু ওসব অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ এমনকি ১৪ দলের কোনো নেতাকর্মী আমন্ত্রণ পান না।
তিনি আরও বলেন, আমরা কোনোভাবে চাই না ধানের শীষের প্রার্থী জয়ী হয়ে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পাশে দাঁড়ান। আমরা বিশ্বাস করি, নৌকা প্রতীক নিয়ে আপনি জয়লাভ করে মেয়র লিটনের সঙ্গে রাজশাহীর উন্নয়নে অংশ নেবেন।
সভায় বোয়ালিয়া থানা পশ্চিম আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, বলতে লজ্জা লাগে, আমার কাছে যখন কোনো কর্মী প্রয়োজনে সংসদ সদস্যের কাছে যাওয়ার অনুরোধ করেন, আমি মাথা নিচু করে জানাই এমপি আমাকে চেনেন না। এ ব্যর্থতা আমার। কিন্তু এমন বিষয় তারা মাথায় নিচ্ছেন না। কারণ এ নির্বাচন শেখ হাসিনার নির্বাচন, নৌকা প্রতীকের নির্বাচন। কাজেই নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেবেন।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আবেগপ্রবণ। তারা অর্থ-বিত্ত চান না। শুধু ভালোবাসা চান। নেতাকর্মীদের মাথায় হাত দিয়ে দেখুন, অন্যরা ১০ কোটি টাকা দিয়েও যা পাবেন না, আপিন মাথায় হাত দিয়েই তা পাবেন।
সভায় অংশ নিয়ে জেলা জাসদের সভাপতি মজিবুল হক বকু বলেন, বিতর্ক হচ্ছে, দোষ দেয়া হচ্ছে, সবই ঠিক আছে। কিন্তু আমি মনে করি এর জন্য আমাদের দুই মূল নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও ফজলে হোসেন বাদশা।
কারণ-এখানে ১৪ দল আছে, ১৪ দলের শীর্ষ দুই নেতা আছেন। এমপি ও মেয়রের জবাবদিহিতার একটা জায়গা আছে। সেই ১৪ দলের মিটিং এখানে কখনো হয় না। যখন খায়রুজ্জামান লিটনের দরকার হয় তখন তিনি ডাকেন, যখন ফজলে হোসেন বাদশার দরকার হয় তখন তিনিও ডাকেন। কিন্তু এ মিটিং যদি প্রতি মাসে হতো, প্রতি দুই মাসে, প্রতি তিন মাস অন্তর হতো, চার মাস একটা হতো, তাহলে আমাদের নেতাকর্মীদের বলার জায়গা থাকতো।
সভায় রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমার এবং ফজলে হোসেন বাদশার দ্বারা নেতাকর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমি মাঝে পাঁচ বছর রাষ্ট্রীয় কোনো দায়িত্বে ছিলাম না। এবার আপনাদের প্রচেষ্টায় মেয়র হয়েছি। তাই সবসময় আপনাদের পাশে থাকব।
তিনি আরও বলেন, এ আসনে বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু মোটেই দুর্বল প্রার্থী নয়। তিনি একটানা ১৭ বছর মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। সংসদ সদস্য ছিলেন। কাজেই প্রচার শুরুর প্রথম দিন থেকে ভোটের মাঠ দখল করে নিতে হবে।
ফজলে হোসেন বাদশা স্বীকার করেন, অনেক অভিমান-অনুযোগ রয়েছে। একটি মানুষ শতভাগ সঠিক থাকতে পারে না। আমি আপনাদের অভিযোগ মাথা পেতে নিচ্ছি। আপনারা যেভাবে বলেছেন, তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার প্রতি আপনারা শ্রদ্ধা এবং আস্থা রেখেই বলেছেন। আমি এটি নেতিবাচকভাবে নেইনি। আপনাদের বক্তব্য আমি স্মরণ রাখব। আমি সারা জীবন মানুষের সঙ্গে থেকে রাজনীতিবিদ হওয়ার চেষ্টা করেছি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বাদশা বলেন, আপনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত একই দলের কর্মীর মতো রাস্তায় নেমে জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। যার ফলে জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ ক্ষমতায়। আমি অনুরোধ করব, আপনার আমার অতীত কার্যক্রম পর্যালোচনা করবেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগরের সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নওশের আলী, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, নগর জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী প্রমুখ।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/পিআর