অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করায় সমালোচনার মুখে ইনাম চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৩:২০ এএম, ৩০ নভেম্বর ২০১৮

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেনের বাসায় সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়ে দলের ভেতরে সমালোচনার মুখে পড়েছেন সিলেট-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী ইনাম আহমদ চৌধুরী।

এই সাক্ষাৎকে সিলেটের রাজনীতির সম্প্রতির দৃষ্টান্ত হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাসহ অনেকে অভিহিত করলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা ইনাম চৌধুরীর এ কাজকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইনাম আহমদের সমালোচনায় মেতে উঠেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে ইনাম আহমদ চৌধুরী নগরের ধোপাদিঘীরপাড়ে অর্থমন্ত্রীর বাসভবন হাফিজ কমপ্লেক্সে গিয়ে তার সাথে দেখা করেন। এ সময় অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সাথেও কুশল বিনিময় করেন তিনি। আর এতেই দুদলের নেতাকর্মীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান।

ইনাম চৌধুরীর এই সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখে, নেতাকর্মীদের প্রতিনিয়ত নির্যাতনের মুখামুখি দেখেও যারা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানের কথা চিন্তা করেন, আমি স্পষ্টভাবে মনে করি তাদের সাথে আমার চিন্তা ও ধ্যান-ধারণার মিল হতে পারে না। আমি গতকাল (বুধবার) নির্বাচনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়াটাকে আমার স্পষ্ট ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করছি। অনুতপ্ত বোধ করছি।

ছাত্রদল নেতা রাজ্জাক খান রাজ ফেসবুকে লিখেছেন, দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখে, নেতাকর্মীদের কারাগারে রেখে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানের কথা চিন্তা করেন? ছিঃ ছিঃ এ কেমন রাজনৈতিক সম্প্রীতি?

অন্যদিকে, এই সাক্ষাৎকে সিলেটের রাজনৈতিক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন জগন্নাথপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তাদির আহমদ মুক্তা।

তিনি সৌজন্য সাক্ষাতের দুটি ছবি ফেসবুক দিয়ে লিখেছেন, এমন দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র ...। এএমএ মুহিত আর ইনাম আহমদ চৌধুরী দুজনের রাজনৈতিক পরিচয় ভিন্ন হলেও পারিবারিক সম্পর্ক, চিন্তা-চেতনা, শিক্ষা আর পেশাগত কারণে দুজনের অবস্থান কাছাকাছি। একজন বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আর আরেকজন প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান।

এ দুজনই সিলেটের দুটি আলোকিত পরিবারের সন্তান। ইনাম চৌধুরীর বড় ভাই, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ফারুক চৌধুরী ছিলেন অর্থমন্ত্রী মুহিতের বন্ধু। ইনাম চৌধুরী, আবুল মাল আবদুল মুহিতকে বড় ভাই হিসেবে মান্য করেন। তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জানাতে এবং দুআ নিতে অর্থমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. এ কে এ মোমেন, বিএনপির প্রার্থী ইনাম চৌধুরীকে স্বাগত জানান। তিনজন দীর্ঘসময় আলাপচারিতা করেন এবং সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এমন দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ুক দেশের সর্বত্র। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা যদি পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন তাহলে নির্বাচনী মাঠ অনেকাংশেই স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে চালু হবে শ্রদ্ধা আর সম্প্রীতির সংস্কৃতি।

এদিকে, দলীয় নেতাকর্মীদের এই সমালোচনার প্রেক্ষিতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট নগরের একটি হোটেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে ইনাম আহমদ চৌধুরী বলেন, অর্থমন্ত্রীর বাসায় যাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।

সাবেক সচিব ইনাম আহমদ চৌধুরী বলেন, আমি সিলেটে এসে দেখেছি অনেক ধরপাকড় চলছে, হামলা-মামলা দেয়া হচ্ছে। এটা যাতে আর না হয় এবং সিলেটে রাজনৈতিক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য আমি অর্থমন্ত্রীর বাসায় গিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী সিলেটের মন্ত্রী এটা সিলেটের ট্রেডিশনেরই অংশ। সিলেটে সৌহাদ্যপূর্ণ আবহ রয়েছে। এটা বজায় রাখতেই আমি সেখানে গিয়েছিলাম। যাতে করে প্রশাসন ও জনগণ এটা দেখে বুঝতে পারে এখানে আমরা যুদ্ধ করতে অাসিনি। সিলেটের জনগণও এই মেসেজ চায়।

ইনাম আহমদ চৌধুরী আরও বলেন, আমরা এখন অত্যন্ত জটিল অবস্থার মধ্যে অবস্থান করছি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ রয়েছেন। ইলিয়াস আলীসহ অনেককেই গুম করা হয়েছে। হামলা-মামলার মাধ্যমে দেশে ভিন্ন অবস্থা বিরাজ করছে। এই সমস্ত অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আন্দোলন সংগ্রামেরই অংশ হিসেবে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমি এই অবস্থার পরিসমাপ্তি চাচ্ছি।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য যে সমতল ভূমি প্রতিষ্ঠার আশা এখনো পূরণ হয়নি। সমতল ভূমি প্রতিষ্ঠায় খুব দ্রুতই পদক্ষেপ নিতে হবে দায়িত্বশীলদের। আমরা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন চাই না। খালেদা জিয়ার মুক্তি, ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়াদের প্রত্যাবর্তন, হামলা-মামলার অবসানের লক্ষ্য অর্জনে সিলেটবাসী অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।

সিলেট-১ আসনে বিএনপির দুইজন প্রার্থীর বিষয়ে সাংবাদিকরা ইনাম আহমদ চৌধুরীর অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের ৮০ শতাংশ আসনেই বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে। মূলত অসংখ্য মামলার কারণেই একাধিক প্রার্থী দেয়া। এখানে বিভক্তির অবকাশ নেই। আমি বিগত দুই দশক থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছি। সিলেটের সাথে আমার আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। ব্যক্তিগত কোনো লোভ-লালসা বা আসক্তির কারণে আমি প্রার্থী হইনি। প্রার্থী হয়েছি আদর্শের জন্য, আদর্শকেই প্রতিষ্ঠিত করতে। আমার এই উপস্থিতি মোটেও আকস্মিক নয়।

উল্লেখ্য, এবার বিএনপি থেকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরকে সিলেট-১ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দুজনই বুধবার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেবে দল।

ছামির মাহমুদ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।