‘এমন হাসপাতালে সুস্থরাও অসুস্থ হয়ে পড়েন’
নানা অব্যবস্থাপনার মধ্যে চলছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে এতে নজর নেই কর্তৃপক্ষের। এছাড়া হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ।
জানা গেছে, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কীতে ১৯৯৬ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করা হয়। ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের থাকার জন্য তিনটি আবাসাসিক ভবনও নির্মাণ করা হয়। এরপর শুরু হয় কমপ্লেক্সটিতে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা। হাসপাতালটিতে গাইনি, মেডিসিন, সার্জারি ও ডেন্টাল বিভাগে সেবা চালু রাখা হয়। এখানে মির্জাপুর উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেলদুয়ার ও বাসাইল উপজেলার শত শত রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
সরকারি এই হাসপাতালটিতে ২৮/৩০ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হয়। বর্তমানে ২৩ জন চিকিৎসকের মধ্যে ২১ জন কাগজে কলমে কর্মরত আছেন। তবে এরমধ্যে ৫ জন ২ থেকে ৩ বছর ধরে প্রেষণে ও একজন প্রায় তিন বছর ধরে অনিয়মিতভাবে অনুপস্থিত রয়েছেন। আর বাকি চিকিৎসকদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত না আসায় চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
হাসপাতালটিতে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা থাকলেও জরুরি সময়ে সেটি পাওয়া যায় না। অ্যাম্বুলেন্সের চালক অন্যত্র সার্ভিস দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে ফিল্ম সংকট ও নষ্ট থাকার অজুহাতে কমপ্লেক্সের এক্সরে মেশিনটিও বন্ধ রাখা হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
হাসপাতালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সাপ্লাই পানিতে আয়রনের কারণে রোগীরা হাসপাতালের পাশের বিভিন্ন স্থান থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে থাকেন। এছাড়া টয়লেট-বাথরুমে দুর্গন্ধে প্রবেশ করাই দায়। এমনকি হাসপাতালের ফ্লোরও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। এখানকার অন্যতম সমস্যার মধ্যে রয়েছে লোডশেডিং এবং জেনারেটরের জ্বালানি সংকট। শুধুমাত্র অপারেশন চলাকালে বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালু করা হয় বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছেন।
এছাড়া ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে বিড়ালের অবাধ বিচরণ চোখে পড়ে। মেঝেতেই পড়ে আছে বিড়ালের বিষ্টা। রোগীদের বিছানাগুলোও নোংরা আবর্জনা মাখা। এমন পরিবেশে একজন সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী জানান, হাসপাতালটি মহাসড়ক সংলগ্ন হওয়াই অনেক ডাক্তার মাঝে মধ্যে আসেন এবং হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই চলে যান।
এ বিষয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের এপিএস মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য তৌফিকুর রহমান তালুকদার রাজীবের সঙ্গে কথা হলে হাসপাতালটিতে দালালদের উপদ্রবের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, সাপ্লাই পানিতে আয়রন ও টয়লেট-বাথরুমের অবস্থা খুবই খারাপ। এছাড়া ডাক্তার নিয়োগ থাকলেও নানা অজুহাতে তারা অনুপস্থিত থাকেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ জানান, ৩১ শয্যা হাসপাতালটিতে ২১ জন ডাক্তার, ১৩ জন স্বাস্থ্য সহকারী পরিদর্শক নিয়োগ থাকলেও তাদের অনেকেই নিয়মিত হাসপাতালে আসেন না। একজন সুইপার ও একজন ঝুড়ুদার রয়েছে। তারা নিয়মিত পরিষ্কার করেন। এছাড়া জেনারেটরের তেল বাবদ সরকার থেকে কোনো বরাদ্দ না থাকায় এবং এক্সরে মেশিনে ত্রুটি থাকায় মাঝে মধ্যে বন্ধ রাখতে হয়।
এসএম এরশাদ/এফএ/জেআইএম