সবকিছুতেই মিল তাদের


প্রকাশিত: ০৭:২০ এএম, ১৮ আগস্ট ২০১৫

দিনাজপুর শহরের দক্ষিণ মুন্সিপাড়া মহল্লার তিন যুবক ঢাকায় গিয়ে ছয় বছর অন্তর অন্তর অপহরণের পর খুন হয়েছেন। নিহত তিনজনই শহরের দক্ষিণ মুন্সিপাড়া মহল্লার বাসিন্দা এবং দিনাজপুর জিলা স্কুলের ছাত্র। এছাড়া তাদের জানাযা নামাজ হয়েছে দিনাজপুর জিলা স্কুল মাঠে, তিন জনকেই দাফন করা হয়েছে উপশহর ফরিদপুর গোরস্থানে।

মেধাবি ছাত্ররা শিক্ষা ও জীবিকার প্রয়োজনে ঢাকায় গিয়ে অপহরণের পর তিন জনর মরদেহ ডোবা বা নদী থেকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। খুবই বেদনাদায়ক হলেও এ হৃদয়স্পর্শী ঘটনা দিনাজপুর শহরে টক আব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।

সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার মো. গোলাম মাসুম (৩০)। তিনি এ বছরের ৯ আগস্ট নিখোঁজ হন। এরপর ১১ আগস্ট গাজীপুরের কালিয়াকৈর আনসার একাডেমির ঝিলে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
২০০৯ সালের ৯ জানুয়ারি নিখোঁজ হন ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাকিব আহমেদ। ১১ জুলাই শেরে-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ডোবায় তার মরদেহ পাওয়া যায়।

এর আগে ২০০৩ সালের ৬ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবি ছাত্র ফিরোজ আলম পরশ অপহরণ হন। ১৭ জানুয়ারি ঢাকা তুরাগ নদীতে তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

কেউ শিক্ষার জন্য, কেউবা জীবিকার প্রয়োজনে অথবা জীবন গড়ার জন্য মেধা সম্পন্ন এ তরুণরা ঢাকায় গিয়েছিলেন নিজের ও পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করতে। পাশাপাশি একই ধরনের হত্যায় অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ায় শোকের মাতম যেন আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

ফিরোজ আলম পরশ দিনাজপুর জিলা স্কুল থেকে বোর্ড স্ট্যান্ড করে ঢাকা বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে মেধার স্বাক্ষর রেখে ভর্তি হয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

রাকিব আহমেদ ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাস করে চাকরির খোঁজে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা প্রশাসন হলে অবস্থান করতেন।

সর্বশেষ প্রকৌশলী গোলাম মাসুম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কালিয়াকৈর ডিভাইন টেক্সটাইল মিলে প্রিন্টিং ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

হতভাগা এই মেধাবি তরুণরা জানতেন না তাদের অপরাধ। ফিরোজ আলম পরশকে অপহরণের পর হত্যা করেন তার খুব কাছের বন্ধু দিনাজপুর শহরের ঠিকাদার খাদেমুল ইসলামের ছেলে মঞ্জুর মোর্শেদ সান।

রাকিবকেও হত্যা করা হয় তার খুব কাছের বন্ধু শ্যামল সরকারের সঙ্গে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করার সময়।

আর মাসুমও হয়তো এমনই কোনো খুব কাছের সহকর্মীর সহযোগিতায় খুন হয়েছিলেন এমনই আশঙ্কা করছেন তার পরিবারের সদস্যরা।

দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নিহত পরশের বড় ভাই জাগো নিউজকে জানান,পরশ-রাকিব ও মাসুমের এ হত্যাকাণ্ডের বিচার তাদের পরিবার হয়তো পাবে কী না জানা নেই। পরশ হত্যার বিচার দীর্ঘ ১৭ বছরে ঢাকা মহানগর জজ আদালতে চলমান অবস্থায় প্রধান আসামি মঞ্জুর মোর্শেদ সান বিদেশে পালিয়ে গেছেন।

রাকিবের হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে গিয়ে তাদের আশপাশের লোকদের পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচাতে তার বাবা মোজাহার আলী মামলাটি পরিচালনা বন্ধ করে দিয়েছেন।

আর সর্বশেষ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার মাসুম হত্যাকাণ্ডের বিচার এখন মোবাইল আর এটিএম বুথের টাকা উত্তোলনের রহস্য নিয়ে পুলিশ হয়ত ছিনতাইয়ের  ঘটনায় হত্যা হয়েছে বলে আদালতকে অবহিত করবেন এমন অশংকা তার পরিবারের সদস্যদের।

একের পর এক এই হত্যাকাণ্ডগুলোর বিচার না হলেও পরিবারের সদস্যরা এখনও তাকিয়ে আছে তার স্নেহ ভালবাসার মানুষটির নির্মম পরিণতির বিচারের দিকে। ফিরোজ আলম পরশের ৭৫ বছরের বৃদ্ধ মাতা রাবেয়া আলম আজোও পুত্র শোকে পাথর হয়ে আছেন। রাকিবের বাবা মোজাহার আলী হত্যাকান্ডের বিচার চাওয়াকে অভিশাপ মনে করেন। মাসুমের পিতা আলহাজ্ব আবুল কাশেম তার পুত্র হত্যার বিচারের জন্য এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।

স্বজনহারা আহাজারি আর প্রিয়জনের ক্ষতবিক্ষত লাশের গন্ধ এখন দিনাজপুরের মুন্সিপাড়া একটি নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৬ বছর অন্তর অন্তর একটি করে মেধাবী ছেলের লাশ আসবে প্রিয়জনদের কাছে। তাই ২০০৩, ২০০৯ ও ২০১৫ এখন খুব পরিচিত ।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।