অসুস্থ নয়, কারাগারে আত্মহত্যা করেছিলেন দীপার প্রেমিক কামরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর
প্রকাশিত: ১০:৫০ এএম, ১১ নভেম্বর ২০১৮

রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও আওয়ামী লীগ নেতা বাবুসোনা হত্যা মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম (৪৮) অসুস্থ হয়ে মারা যাননি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার ভোরে কারাগারে নিজ কক্ষে গলায় চাদর পেঁচিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।

প্রথমে কারা কর্তৃপক্ষ হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগের কারণে কামরুলের মৃত্যু হয়েছে বলে জানালেও পরে অন্য কয়েদিদের তথ্যমতে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হন জেলার আমজাদ হোসেন। শনিবার রাতে আমজাদ হোসেন বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।

কারাগারের বন্দীদের বরাত দিয়ে জেলার আমজাদ হোসেন জানান, কামরুল ইসলাম ভোরে উঠে ওজু করে নামাজ পড়েন। পরে তার সঙ্গে থাকা অন্য দুই বন্দী নামাজের জন্য অজু করতে গেলে তিনি নিজের গায়ে জড়ানো চাদর জানালার রডের সঙ্গে বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে তার গোঙানির শব্দ শুনে অন্য বন্দীরা জেলারকে খবর দেন। এ সময় দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ২০ মিনিট পর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চিকিৎসক কামরুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি জানান, কামরুল ডায়াবেটিস ও হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। গত ৩০ অক্টোবর থেকে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। সর্বশেষ ৬ ও ৭ নভেম্বর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। ওইসময় আদালতে হাজির করা হয় কামরুল ও দীপাকে। ৭ নভেম্বর আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন কামরুল। এক সপ্তাহ যাবৎ শারীরিকভাবে অসুস্থসহ বিষণ্নতায় ভুগছিলেন তিনি।

এদিকে চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল রাতে এই মামলার অন্যতম অভিযুক্ত বাবুসোনার অফিস সহকারী ও স্ত্রী দীপা ভৌমিকের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত মদন চন্দ্র বর্মন মিলন ওরফে মিলন মোহন্ত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ফলে অভিযুক্ত মিলন মোহন্তকে বাদ দিয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর কামরুল ও দীপার নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আর এখন কামরুলের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাবু সোনা হত্যা মামলার একমাত্র আসামি থাকলেন তার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা। তিনি রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

এ মামলায় তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী সবুজ ও রোকন গ্রেফতার হলেও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, নগরীর তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন কামরুল। একই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন নিহত বাবু সোনার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দীপা। চলতি বছরের ২৯ মার্চ রাতে অ্যাডভোকেট বাবু সোনাকে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেন স্ত্রী সিগ্ধা ও তার কথিত প্রেমিক কামরুল।

পরে বাবু সোনা নিখোঁজ হয়েছেন বলে শুক্রবার বিকেলে প্রচার করেন দীপা। ৩১ মার্চ কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি ও পরদিন রোববার থানায় মামলা করেন বাবু সোনার ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিক সুবল।

এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় বাবু সোনার স্ত্রী দীপাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব আটক করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন এবং মরদেহের অবস্থান সম্পর্কে জানান। এর আগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন কামরুল।

পরে ওইদিন রাত ২টার দিকে বাবু সোনার নিজ বাড়ি তাজহাট বাবুপাড়া থেকে আধা কিলোমিটার দূরে তাজহাট মোল্লাপাড়ার শিক্ষক কামরুল ইসলামের ঢাকায় বসবাসরত বড় ভাইয়ের নির্মাণাধীন বাড়ির ঘরের মাটি খুঁড়ে বাবু সোনার মরদেহ উদ্ধার করে র্যাব।

মামলার বিবরণে জানা যায়, নগরীর তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা স্নিগ্ধা সরকার দীপার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই স্কুলের শিক্ষক কামরুল ইসলামের। মূলত পরকীয়া প্রেম, পারিবারিক অশান্তি ও বাবু সোনার অর্থ-সম্পত্তি আত্মসাতের আশায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন দীপা এবং কামরুল।

জিতু কবীর/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।