নোয়াখালী-৩ আসন বুলু চায় উদ্ধার করতে, আ.লীগ দখলে রাখতে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নোয়াখালী
প্রকাশিত: ১২:৪৩ পিএম, ০৯ নভেম্বর ২০১৮

আগামী ২৩ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী হাওয়া ততই বইছে নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে। ৭৫ পরবর্তী এ আসনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একবারও জয়ী হতে পারেনি। ২০০৮ সালে এ আসন থেকে বিএনপি নেতা বরকত উল্যাহ বুলু এমপি হয়েছিলেন।

দীর্ঘ কয়েক বছর দখলে থাকা হারানো আসনটি এবার পুনরুদ্ধারে বিএনপির নেতাকর্মীরা বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও যেকোনো মূল্যে এ আসনটি তাদের দখলে রাখার লক্ষে ঐক্যবদ্ধ।

রাজনীতির ময়দানে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার প্রধান ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বেগমগঞ্জ উপজেলা অবস্থিত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী চৌমুহনী বাণিজ্য নগরী নিয়ে নোয়াখালী-৩ বেগমগঞ্জ আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১৬টি ইউনিয়ন ও চৌমুহনী পৌরসভা নিয়ে এ আসনটি গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯১ হাজার ৯৩৭ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১৪৫টি এবং বুথের সংখ্যা ৮৪৯টি।

চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সাল আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হলেও বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম বিএনপি থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আবার বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিএনপির, বাকি ১৩টি ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন।

এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি গ্লোব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুর রশিদ কিরন এবার মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া সাবেক সেনা প্রধান মইন ইউ আহম্মেদের ছোট ভাই বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিনহাজ আহমেদ জাবেদ, বিশিষ্ট শিল্পপতি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান সাবেক ডাকসু সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি এটিএম এনায়েত উল্যাহ, চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র এবং পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সলও মনোনয়ন চাইবেন।

দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় তারা নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেত্রী লুৎফুন্নাহার মুন্নিও এ আসনে থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা গেলে বিএনপির এখনও পর্যন্ত একক প্রার্থী হিসেবে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যা বুলুর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে সে ক্ষেত্রে তার স্ত্রী শামিমা বরকত লাকী মনোনয়ন চাইতে পারেন।

১৯৯১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মূলত এ আসনটি বিএনপির একক দখলে ছিল। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ দুই দফায় এ আসনটি বিএনপি নেতা বরকত উল্যা বুলুর একক দখলে ছিল। মাঝখানে ২০০১ সালে বিএনপি থেকে বরকত উল্যা বুলু টেকনোক্র্যাট কোটায় প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তখন বিশিষ্ট শিল্পপতি পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম হাসেম বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এ আসনে একবার এমপি নির্বাচিত হন। ওই সময় বরকত উল্যা বুলু প্রথমে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী পরে উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেত্রী লুৎফুন্নাহার মুন্নিকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তিনি মাত্র ৫ হাজার ভোট পেয়ে জামানত হারান।

সেই বার আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্রভাবে দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্লোব গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুর রশিদ কিরন।

২৪ হাজার ২৯১ ভোটে তিনি বিএনপির প্রার্থী বরকত উল্যাহ বুলুর কাছে পরাজিত হন। মামুনুর রশিদ কিরন ভোট পেয়েছিলেন ৭৪ হাজার ২৪৬ ভোট আর বুলু পেয়েছেন ৯৮ হাজার ৫৩৭ ভোট। তখন সাবেক সেনা প্রধান মইন ইউ আহম্মেদের ছোট ভাই বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ -সভাপতি মিনহাজ আহম্মেদ জাবেদও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। তিনি প্রায় ৪৭ হাজার ভোট পেয়েছেন তখন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ আ.লীগের অধ্যাপক মো. হানিফ এ আসনে নির্বাচিত হন। জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে একবার আহম্মদ নজির ও একবার বোরহান উদ্দিন এমপি নিবার্চিত হন। তবে তখন নোয়াখালীর এ আসনটি দু্ইভাগে বিভক্ত ছিল। এর পরে ‘৮৬ ও ৮৮ সালে দুইবার জাসদ রব থেকে সৎ রাজনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান এমপি নিবার্চিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামুনুর রশিদ কিরন এ আসনে এমপি হন। তখন বিএনপি জাতীয় নিবার্চন অংশগ্রহণ করেনি।

এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে নজরুল ইসলাম, ফজলে এলাহি সোহাগ মিঞাসহ একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া জেএসডি নোয়াখালী জেলা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল জলিল এ আসনে প্রার্থী হবেন যা অনেকটাই চূড়ান্ত।

১৯৭৩ সালের পর দীর্ঘ সময় এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল না। ২০১৪ সালে বিশিষ্ট শিল্পপতি গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ কিরন এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ৫ বছরে নোয়াখালী-৩ বেগমগঞ্জ আসনে প্রায় ১৫শ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে।

এছাড়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে কিরনের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি নিয়মিত এলাকায় থাকেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার সর্ম্পক থাকার কারণে তিনি বেশির ভাগ মানুষের কাছে প্রিয় রাজনীতিবিদ। পাশাপাশি সাবেক সেনা প্রধান মইন ইউ আহম্মদের ছোট ভাই মিনহাজ আহম্মেদ জাবেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বেগমগঞ্জসহ গোটা নোয়াখালীতে উন্নয়নমূলক অসংখ্য কাজ করেছেন। উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত বেগমগঞ্জের আনাচে কানাচে রাস্তা-ঘাট স্কুল কলেজ মাদরাসাসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন অবহেলিত মানুষের দুর্ভোগ লাগবে তার সহযোগিতায় উন্নয়মূলক কর্মকাণ্ডে তিনিও সাধারণ মানুষের আস্থার ঠিকানা হয়ে উঠেন।

অপরদিকে বিএনপির দুর্গ তথা ভোট ব্যাংক হিসেব খ্যাত এ আসনটিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে বরকত উল্যাহ বুলু নির্বাচন করলে হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করে খালেদা জিয়াকে উপহার দিবেন বলে মনে করেন বিএনপির নেতারা।

মিজানুর রহমান/এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।