এসআই বললেন ‘ভুল হয়ে গেছে, মাফ করে দিন’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন কোনাবাড়ি থানা এলাকায় সাতজনকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে দুই লাখ ৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক দারোগার বিরুদ্ধে। এ ঘটনা প্রকাশ করলে তাদের মাদক, অস্ত্র ও হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দিয়েছেন ওই দারোগা।
অভিযুক্ত দারোগা (এসআই) ইয়াসিন আরাফাত গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ি থানায় কর্মরত। টাকা হাতিয়ে নেয়া পরিবারগুলোর মধ্যে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, দুইজন মুদি দোকানি এবং বাকিদের মধ্যে ইট সরবরাহকারী, কৃষক, গাড়ি চালক ও এমনকি স্কুলছাত্রও রয়েছেন।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে কোনাবাড়ির আমবাগ মধ্যপাড়া বাংলালিংক টাওয়ার এলাকার বাসিন্দা মৃত আবেদ আলীর ছেলে ব্যবসায়ী জামাল হোসেন (২৯) জানান, গত ১৯ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে ভাত খাচ্ছিলেন। এসময় সাদা পোশাকে কোনাবাড়ি থানার এসআই একজন পোশাকধারী পুলিশ নিয়ে ঘরে ঢুকেই প্রথমে তার মোবাইল নিয়ে নেয়। পরে তাকে তাদের সঙ্গে থানায় যেতে বলেন। কারণ জানতে চাইলে বলেন ৩-৪ বছর আগে তার বাসায় অবৈধ গ্যাস লাইন ছিল।
গ্যাস পোড়ানোর বিল বাবদ ২ লাখ টাকা দিতে হবে। না দিলে থানায় নিয়ে মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে কোর্টে পাঠানো হবে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে স্বজনদের সামনে অশ্লীল গালাগাল এবং মারধর শুরু করে। বাধ্য হয়ে তার বৃদ্ধ মা ধার করে ২৮ হাজার টাকা দিলে রাত ১১টার দিতে তারা চলে যায়। যাওয়ার আগে এ কথা প্রকাশ করলে নাশকতার পুরোনো মামলায় গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে যায়।
একই এলাকার মৃত নুরু সরকারের ছেলে প্রাইভেটকার চালক সানোয়ার হোসেন বলেন, ওই রাতে তিনজন নিয়ে সোয়া ১১টার দিকে তার ঘরে হানা দেয় ওই এসআই। ওই সময় তিনি খেতে বসেছিলেন। একই ধরনের অভিযোগ তুলে তার কাছেও ২ লাখ টাকা দাবি করে।
অপরাগতা প্রকাশ করলে দরজায় লাথি ও অশ্লীল গালাগাল শুরু করে। শব্দে মা, স্ত্রী সন্তান উঠে পড়ে। তাদের সামনেই কিল-ঘুষি মারতে থাকেন এসআই ও সঙ্গে থাকা পুলিশ কনস্টেবল। পরে ধার দেনা করে ৫০ হাজার টাকা দিলে রাত সোয়া ১২টার দিকে এ ঘটনা না প্রকাশের জন্য শাসিয়ে চলে যায়।
একই ভাবে গত ১৮ ও ১৯ অক্টোবর রাতে একই অভিযোগে একই এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মতিন সরকারের ছেলে বাতেন সরকারের ৫০ হাজার, রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে কৃষক রাইজুদ্দিনের ৩০ হাজার, ইন্নছ আলীর ছেলে মুদি দোকানী রাশেদে মিয়ার ১৫ হাজার, সবুর আলীর ছেলে কৃষক আলাল মিয়ার ৫ হাজার এবং মৃত নাসির উদ্দিনের ছেলে স্কুলছাত্র আদিল হোসেনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে যান ওই পুলিশ সদস্যরা। তাদেরকেও টাকা নেয়ার কথা গোপন রাখার জন্য হুমকি দেন।
স্কুলছাত্র আদিল হোসেন জানায়, তার বাড়িতে কোনোদিন অবৈধ গ্যাসের চুলা জ্বলেনি। বৈধ চুলার কাগজপত্র দেখাতে চাইলেও এসআই কোনো কথা শোনেনি। উল্টো তাকে ও বড় বোনকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। ঘটনাটি সে প্রতিবেশী মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শেখ আক্কাসকে জানান। পরে তিনি ২৫ হাজার টাকায় ফয়সালা করে দেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আক্কাস জানান, কিছুদিন আগে আদিলের বাবা মারা গেছে এবং ওরা কোনো অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করেনি। তাই তাকে হয়রানি না করতে এসআইকে বলেছিলাম। টাকা নেয়ার বিষয়টি জানা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই ইয়াসিন আরাফত প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে তথ্য প্রমাণ তুলে ধরলে বলেন, ‘ভুল হয়ে গেছে, মাফ করে দিন। সবার টাকা ফেরত দিব।’
এদিকে গত ২৫ অক্টোবর দুপুরে এসআই ইয়াসিন আরাফাত ব্যবসায়ী জামাল হোসেনের কাছ থেকে নেয়া ৩০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে যান বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জানতে কোনাবাড়ি থানায় গিয়ে ওসি এমদাদ হোসেনকে পাওয়া যায়নি। তবে পরিদর্শক (অপারেশন) মো. হাসনাত জানান, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তাদের কাছে কেউ করেনি। হুমকি দিয়ে টাকা নেয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/পিআর