রাজশাহী-৫ আসনে চ্যালেঞ্জের মুখে দারা, এগিয়ে নাদিম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৪:৪১ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৮

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপর) আসনে দলের মনোনয়ন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা। তবে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা অনেকটাই নির্ভার।

১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নাদিম এবং ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন দারা। এর মধ্যে সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপি জোট ভোট বর্জন করায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী দারা। এই দুই প্রার্থী ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের একাধিক প্রার্থী রয়েছে ভোটের মাঠে। এছাড়া জাতীয় পার্টিরও প্রার্থী রয়েছেন এখানে।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হবার পর দলের তৃণমূলের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান আবদুল ওয়াদুদ দারা। পরের মেয়াদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করার পর দূরত্ব আরও বেড়ে যায়। এছাড়া বির্তকিত নানান কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ইমেজ সংকটে পড়েছেন তিনি। এবার তার দলীয় মনোনয়ন পাবার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন সাবেক এমপি তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক, স্বাচিপ নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মনসুর রহমান, দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল মজিদ সরদার, সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান-উল-হক মাসুদ ও জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমান।

নির্বাচনী এলাকায় প্রচারপত্র ছড়িয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এখন সক্রিয় রয়েছে ভোটের মাঠে। তবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন স্বাচিপ নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মনসুর রহমান। এরই মধ্যে দলের হাইকমান্ড থেকে গ্রিন সিগন্যালও পেয়েছেন তিনি।

তৃণমূল নেতারা বলছেন, আলোচনায় থাকা প্রার্থীদের মধ্যে সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারার সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন আহসান-উল-হক মাসুদ। এ দুজনই কেন্দ্রের শোকজ নোটিশ পেয়েছেন। অন্য দুজনের মধ্যে এমপি বিরোধী শক্ত বলয় তৈরি করে রেখেছেন পৌর মেয়র আবদুল মজিদ সরকার।

অন্যদিকে, দীর্ঘ ৩৭ বছর ধরে এলাকায় ফ্রি চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন অধ্যাপক ডা. মনসুর। দলমত নির্বিশেষে তার জনপ্রিয়তা সমান। দারা এবারও প্রার্থী হলে বড় ধরনের হার বরণ করতে হবে নৌকাকে। এই পরিস্থিতি ডা. মনসুর হতে পারেন নৌকার মাঝি।

আবদুল মজিদ সরদার বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে গিয়ে আমাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ঘুরে আসতে হয়েছে। নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ছাড়িনি। ফলে বিপুল ভোটে দুবার ইউনিয়ন পরিষদ ও একবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। দলীয় মনোয়নের ব্যাপারে আশাবাদি তিনিও।

অন্যদিকে, কেন্দ্র চাইলে তিনি দলীয় প্রার্থী হতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী অধ্যাপক ডা. মনসুর রহমান। তিনি বলেন, এলাকার মানুষের সুখে দুঃখে তিনি সবসময় পাশে দাঁড়িয়েছেন। সাধ্যমত সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। গণমানুষের প্রতিনিধি হয়ে নৌকার মাঝি হতে চান তিনি। তিনিও আশাবাদি এবার মনোনয়ন পাবেন।

তবে এবারও তিনিই নৌকার প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা। তিনি বলেন, আমি দুই মেয়াদে এমপি থেকে দুই উপজেলার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এসব বিবেচনায় আমি আশা করি, দল আমাকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেবে এবং মানুষ আমাকে আবার নির্বাচিত করবে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ রাজনৈতিক ও ভিত্তিহীন দাবি করেন এমপি।

এ দিকে, টানা ১০ বছর এই আসনের এমপি ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য নাদিম মোস্তফা। ফলে এলাকার তার সমান জনপ্রিয়তা। আসছে নির্বাচনে তিনিই হতে পারেন বিএনপি জোটের প্রার্থী।

তার সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন লড়াইয়ে রয়েছেন পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল। ২০০৮’র নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ দারার কাছে বিপুল ভোটে হেরে যান তিনি।

বিএনপির মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর জিয়া পরিষদের সহ-সভাপতি সিরাজুল করিম সনু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, দুর্গাপুরের দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন, পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জুম্মা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়া হক ও দুর্গাপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুর রহমান মন্টু।

স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, পুঠিয়া-দুর্গাপুরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা নাদিম মোস্তফার। তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকা ছাড়া। ফলে তার জায়গা দখলে নিতে মরিয়া অন্যরা। নাদিম বিরোধী শক্তিশালী জোটও রয়েছে এলাকায়। তবে এই আসন উদ্ধারে নাদিম মোস্তফার বিকল্প নেই।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নজরুল ইসলাম বলেন, সবাই যখন পলাতক, তখন আমি নেতাকর্মীদের পাশে থেকে নির্বাচন করেছি। সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছিলাম। সেই থেকে জনগণের সঙ্গেই আছি। এবারও দল আমার প্রতি আস্থা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।

অন্যদিকে, বিএনপির সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার দাবি, তিনি পুঠিয়া-দুর্গাপুরবাসীর জন্য যা করেছেন তা আর কোনো এমপি করতে পারেননি, পারবেন না। তিনি বলেন, মানুষ এখনও আমার সঙ্গেই আছেন। এখনও কোথাও গেলে কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হয়। নির্বাচনে অংশ নিতে যে যে প্রস্তুতি থাকা দরকার তা আমার আছে। দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে বলে বিশ্বাস করি।

এদিকে, এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও রাজশাহী জেলা সভাপতি অধ্যাপক আবুল হোসেন। এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, দীর্ঘসময় থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে আমার। কিন্তু জোটগত কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে পারিনি। এবার জোটের বাইরে জাতীয় পার্টি নির্বাচন করলে এবং মনোনয়ন পেলে তিনিই এই আসনে জয়ী হবেন।

ফেরদৌস সিদ্দিকি/এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

আরও পড়ুন