ভোগান্তির অপর নাম নওগাঁ পাসপোর্ট অফিস

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ১০:৪৬ এএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

ভোগান্তির অপর নাম নওগাঁ পাসপোর্ট অফিস। টাকা ছাড়া যেন কোনো কাজই হয় না সেখানে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জোগসাজসে সেখানে গড়ে উঠেছে দালালদের একটি সিন্ডিকেট। আর তাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছেন পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা জনসাধারণ।

পাসপোর্ট অফিসে সুমন নামে এক দালালের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার এক নারীর ৫ মিনিটের একটি ভিডিও ফেসবুকে সোমবার থেকে ভাইরাল হয়েছে। তবে ওই নারীর ভিডিওটি এক মাস (০৫/০৯/১৮) আগের হলেও সোমবার সেটি ফেসবুকে আপলোড করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের উজ্জল নামে এক কর্মচারীর সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের জিম্মিদশা থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন জনসাধারণ।

ঘটনার পর থেকে স্ট্যাম্প ভেন্ডার এলাকার ফটোকপির দোকানগুলো বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাসপোর্ট অফিসের নিচে স্ট্যাম্প ভ্যান্ডর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান।

এছাড়া মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে ওই এলাকায় সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট লিটন চন্দ্র দে অভিযান পরিচালনা করে দালাল চক্রের তিন সদস্যকে পাঁচ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।

আটকরা হলেন, সদর উপজেলার হাট-নওগাঁর মৃত কামাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুস সালাম, শহরের চকদেব পাড়ার সাইফুল ইসলামের ছেলে আল মাসুদুর রহমান ও সদর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের নজরুল ইসলামে ছেলে শফিকুল ইসলাম।

সরেজমিনে জানা গেছে, পাসপোর্ট অফিসের নিচে স্ট্যাম্প ভেন্ডার ও ফটোকপির দোকান। আর এ সুযোগে স্ট্যাম্প ভেন্ডার বিক্রেতারা সহজেই পাসপোর্ট অফিসের কাজ করতে পারেন। ফলে সেখানে এক দালাল চক্রের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। আর এ দালালের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সখ্যতাও গড়ে উঠেছে। দালালরা টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সহজেই কাজ করে নিতে পারেন।

পাসপোর্ট করতে আসা জনসাধারণ পাসপোর্ট অফিসের আবেদনপত্রে জন্ম সনদ, বয়স, সত্যায়িতসহ বিভিন্ন ধরনের ভুলভ্রান্তি করেন। এ কারণে হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকে দালালদের শরণাপন্ন হন। দালালরাও এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোটা টাকা হাতিয়ে নেন।

জানা গেছে, সাধারণ পাসর্পোটের জন্য ৩ হাজার ৪৫০ টাকা ও জরুরি ভিত্তিতে ৬ হাজার ৯শ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। আবেদনপত্রের কাগজপত্রসহ আনুষঙ্গিক প্রায় ১শ টাকা খরচ হয়। নিয়মানুযায়ী সাধারণ পাসপোর্ট এক মাস ও জরুরি দুই সপ্তাহের মধ্যে সরবরাহের কথা।

রানীনগর উপজেলার কালিগ্রাম গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার তিনি পাসপোর্ট করতে আসেন। অফিস বিভিন্ন ভুল ধরে বসে। পরে মাসুদ নামে এক দালালের মাধ্যমে ৭ হাজার টাকায় পাসপোর্ট করতে দিয়েছেন।

নওগাঁ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক সচিব কুমার আইন বলেন, যে নারীর ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে তিনি তার সেবা গ্রহণ করে পাসপোর্ট নিয়ে চলে গেছেন। সম্ভবত তার ছেলের পাসপোর্ট হবে। আর এ ঘটনার সঙ্গে উজ্জল নামে এক কর্মচারী সম্পৃক্ত থাকায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

jagonews

তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি সঠিকভাবে ফরম পূরণ এবং ব্যাংকে টাকা জমা দেন পাসপোর্ট অফিস সেই ফরম জমা নিতে বাধ্য।

সেবা গ্রহীতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার অফিসের কোনো কর্মচারী যদি টাকা নেয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে বা টাকা চেয়ে থাকেন তার বিরুদ্ধে সরাসরি অফিসে অভিযোগ করবেন। আমি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে তার বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে সেবা দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, স্ট্যাম্প ভেন্ডার এলাকায় কয়েকটি সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

আব্বাস আলী/এফএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।