ঋণমুক্ত হতে বাবার সঙ্গে অপহরণ নাটক
অপহরণ নাটক সাজিয়ে বাবার কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা আদায় করতে গিয়ে এক প্রকৌশলী তার স্ত্রী ও এক ছাত্রসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন।
এরা হলেন, বগুড়া শহরের রিলায়েবল পলিটেকনিক ইন্সটিটিশনের টেক্সটাইল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মেহেদী হাসান (৩০), তার স্ত্রী আয়শা আকতার (২৪) এবং একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ইউছুব উদ্দিন (২৫)।
গত ১১ দিন ধরে বগুড়া জেলা পুলিশ ও ঢাকা পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স এর একটি টিম সর্বোচ্চ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুক্রবার রাতে কথিত অপহৃত প্রকৌশলী মেহেদী হাসানকে উদ্ধারের পর তাকেসহ অপর ২ জনকে গ্রেফতার করে।
শনিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং-এ বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, সোনাতলা থানার গজারিয়া গ্রামের আবুল হোসেন গত ৫ আগস্ট বগুড়া সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন তার ছেলে প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ৩ আগস্ট দুপুরের দিকে শহরের একটি কোচিং সেন্টার থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন। বিকেল ৪টার দিকে মোবাইল ফোনে জানানো হয় মেহেদী হাসানকে অপহরণ করা হয়েছে এবং মুক্তিপণ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডলের নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের সম্বনয়ে একটি টিম অপহৃতকে উদ্ধারে কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ধারকারী টিম জানতে পারেন অপহৃত ব্যক্তি ৩ আগস্ট থেকে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করে বগুড়ার সন্তাহার, গাইবান্ধা, নীলফামারীর সৈয়দপুর, দিনাজপুর, পার্বতীপুর, নওগাঁ, খুলনা, বাগেরহাট এবং সর্বশেষ ১২ আগস্ট পিরোজপুরে অবস্থান করছেন। এ সময়ের মধ্যের অপহৃতের বাবার কাছে বারবার মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে। সর্বশেষ ২০ লাখ টাকায় মুক্তি দেয়ার দফারফা করা হলে ডাচবাংলা মোবাইল ব্যাংকিংএর ৪টি অ্যাকাউন্ট নাম্বারে টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়। পুলিশ অ্যাকাউন্ট নাম্বারগুলো যাচাই করে জানতে পারেন ৪টি নাম্বারই অপহৃত মেহেদী হাসানের নামে। এছাড়াও পুলিশ অপহৃতের বাবার সঙ্গে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন সেই তথ্যগুলো মুক্তিপণ দাবি করা ব্যক্তির কাছে চলে যাচ্ছে। এতে অপহৃতের পরিবারের সদস্যদের উপর পুলিশের সন্দেহ বেড়ে যায়। একপর্যায় অপহৃতের পরিবারের সদস্যদেরকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। সেখানে তাদেরকে বিভিন্ন কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করার একপর্যায়ে অপহৃতের স্ত্রী আয়শা আকতারের কাছে থাকা একটি মোবাইল ফোন উদ্ধারের পর পুরো রহস্য উদঘাটন হয়ে যায়। এরপর তার স্ত্রীর মাধ্যমে কৌশলে মেহেদী হাসানকে বগুড়ার গাবতলী ডেকে এনে গ্রেফতার করা হয়।
পরে প্রকৌশলী মেহেদী হাসান পুলিশকে জানায়, তিনি একটি কোচিং সেন্টার করতে গিয়ে ৫ লক্ষাধিক টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও তার বাবার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। ২ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য তার বাবা তাকে মানসিক চাপে রেখেছিলেন। তাই বাধ্য হয়ে ধর্ণাঢ্য বাবার কাছ থেকে টাকা আদায়ের কৌশল হিসেবে স্ত্রী আয়শা আকতারের সাথে পরামর্শ করে তার প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ইউছুবের সহযোগিতায় তিনি অপহরণ নাটক সাজিয়েছিলেন।
পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান প্রেস ব্রিফিং-এ পুরো ঘটনা বর্ণনা করে সাংবাদিকদের বলেন, এঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করা হবে।
লিমন বাসার/এমএএস/এমআরআই