আর দেরি হবে না, শেফালির চির বিদায়
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় শেফালি আক্তার (২৩) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গৃহবধূর পরিবারের দাবি, তাকে মারধর করে মুখে কীটনাশক ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
সোমবার সকালে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই গৃহবধূ। ঘটনার পর গৃহবধূর স্বামী পালিয়ে যায়। তবে পুলিশ নিহতের শ্বশুর, শাশুড়িসহ ননদকে আটক করেছে।
পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানায়, তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের ব্রহ্মতল এলাকার সাইবুল ইসলামের মেয়ে শেফালি আক্তারের সঙ্গে একই উপজেলার তেঁতুলিয়া সদরের দর্জিপাড়া গ্রামের খাদেমুল ইসলামের ছেলে লিটন ইসলামের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে দুই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকসহ নানা অজুহাতে শেফালিকে মারধর করতো লিটনসহ তার পরিবারের সদস্যরা। এ নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠকও করা হয়। এর মধ্যে ১০ দিন বাবার বাড়ি থাকার পর রোববার দুপুরে সন্তান নিয়ে শেফালি তার স্বামীর বাড়ি ফিরেন। বাড়িতে দেরিতে আসার অপরাধে বিকেলে লিটন তাকে বেধরক মারপিট করে। এক পর্যায়ে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে স্বামী ও শাশুড়ি তার মুখে কীটনাশক ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টার করেছে বলে প্রচার চালায়। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে প্রথমে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় পুলিশ শেফালির শ্বশুর খাদেমুল ইসলাম, শাশুড়ি সালমা ওরফে ডালিমন ও ননদ খায়রুন আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
শেফালির বাবা সাইবুল ইসলাম বলেন, বিয়ের পর থেকেই লিটন ও তার পরিবারের লোকজন শেফালিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। বাসা থেকে সুস্থ অবস্থায় মেয়েকে তার শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। তার স্বামী ও পরিবারের লোকজন আমার মেয়েকে বেধরক পিটিয়েছে। সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে হত্যা করেছে বলে প্রচার চালায়।
প্রতিবেশী জনপ্রতিনিধি সলেমান আলী বলেন, এর আগেও লিটন শেফালিকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে। এ নিয়ে একাধিকবার বিচার সালিশ করা হয়েছে। তারপরও লিটন ও তার পরিবারের নির্যাতন বন্ধ হয়নি। ওরা মেয়েটিকে বাঁচতেই দিল না।
সদর থানা পুলিশের এসআই আব্দুল জলিল বলেন, প্রাথমিকভাবে ওই গৃহবধূর মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গৃহবধূর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের ওসি জহুরুল হক বলেন, এ নিয়ে গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তার স্বামী পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সফিকুল আলম/এমএএস/এমএস