তিতলি থেকে নিরাপদ কক্সবাজারের উপকূল
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় তিতলি অবশেষে ভারতে আঘাত হেনেছে। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ওড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলে তিতলি আছড়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। গত কয়েকদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে ঘুরতে থাকা গভীর নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে উড়িষ্যা অতিক্রম করেছে।
এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় কয়েকটি জেলাও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। এর মাঝে কক্সবাজারের উপকূলও তালিকায় ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়টি ভারতে আঘাত হানলেও রক্ষা পেয়েছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া ও সদরের উপকূলীয় এলাকা। এমনটিই জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. রইস উদ্দিন মুকুল।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. রইস উদ্দিন মুকুল জানান, ঘূর্ণিঝড় তিতলির আঘাত মোকাবেলায় বুধবার দুপুর থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। ওইদিন বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক জরুরি সভা করে ‘তিতলি’ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় করণীয় নির্ধারণ করা হয়।
তিনি বলেন, উপকূলের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনার ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়। বিপদাপন্ন হলে তাদের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থাসহ নিয়ে রাখা হয় নানা প্রস্তুতি। সেভাবেই উপকূলে মাইকিং করে দূর্যোগপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। উপকূলে ফিরে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সাগরে থাকা জেলার সব মাছধরার বোটগুলোকেও।
তিনি আরও জানান, তিতলি অতিক্রম করার সময় কক্সবাজারের উপকূলে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা কেটে গেছে। খবর নিয়ে দেখেছি ভোর থেকে এখন পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা) কোথাও স্বাভাবিকের চেয়ে পানিও বাড়েনি। দূর্যোগপূর্ণ এলাকা কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও কক্সবাজার সদরের পোকখালী, গোমাতলী এবং পৌরসভার নাজিরারটেকসহ সব এলাকা সুরক্ষিত রয়েছে। জেলায় কোনো ক্ষয়-ক্ষতি নেই।
তবে দিনের কিংবা রাতের জোয়ারে জলচ্ছ্বাস হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলেছে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অফিস সূত্রমতে, বুধবার সারাদিন এবং বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কক্সবাজারে মাত্র ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রাতের মতো এখনো হালকা বৃষ্টিপাত চলমান রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে উপকূলে জলচ্ছ্বাসের মতো হতে পারে।
কুতুবদিয়ার ইউএনও মনোয়ারা বেগম জানান, এখনও পর্যন্ত তিতলির প্রভাবে কোনো ধরনের দূর্যোগের কবলে পড়তে হয়নি দ্বীপবাসীকে। এরপরও বিপদসংকুল সময়ে সাইক্লোন শেল্টারসহ নিরাপদ স্থানে সরে যেতে অনুরোধ করা হয় স্থানীয়দের।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সকল চিকিৎসা কেন্দ্র প্রস্তুত করা ছিল। তৈরি রাখা হয়েছিল উপকূল কেন্দ্রিক পর্যাপ্ত মেডিকেল টিম। এখনো সেভাবেই রয়েছে। কোথাও প্রয়োজন হলে দ্রুত সেখানে পৌঁছে যাবে স্বাস্থ্যটিম।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজি আবদুর রহমান বলেন, তিতলিকে মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। জরুরি অবস্থার জন্য খোলাছিল কন্ট্রোল রুম, এখনো তা বিদ্যমান রয়েছে।
সায়ীদ আলমগীর/এফএ/আরআইপি