রহস্যে ঘেরা মাদারীপুরের দুই স্কুলছাত্রী হত্যা


প্রকাশিত: ১১:৪১ এএম, ১৪ আগস্ট ২০১৫

বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা। চারদিকে তখন নিরবতা ও নিঃস্তব্ধতা। মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ছোট্ট বাজারের পাশের পুকুর পাড়ে হঠাৎ নিরবতা ভেদ করে ভেসে আসে চিৎকারের শব্দ। এর কিছুক্ষণ পরেই এলাকাবাসী দেখতে পায় দুটি ছেলে দুটি মেয়েকে ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালে। হাসপাতালে নেয়ার কিছু সময় পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই স্কুলছাত্রী।

শুক্রবার সকালে সরেজমিনে মস্তফাপুর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, সুমাইয়া ও হেপী মস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। সুমাইয়া মস্তফাপুর গ্রামের বেল্লাল শিকদারের মেয়ে এবং হেপী একই এলাকার হাবিব খানের মেয়ে। দুইজনে এক সঙ্গে স্কুলে যেত, অন্তঃরঙ্গ সম্পর্ক ছিল দুইজনের মধ্যে।

বৃহস্পতিবার দুপুরের খাবার খেয়ে প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় দুই বান্ধবী। এরই মধ্যে সন্ধ্যার মধ্যে আকাশ ভেঙে দুই পরিবারের কাছে খবর আসে মৃত্যুর।

দুই স্কুলছাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনা এখন রহস্য দানা বেঁধেছে। তবে পুলিশ প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, ত্রিভুজ প্রেমের কারণে এ নিহতের ঘটনা ঘটতে পারে। যদিও উভয় পরিবারের পক্ষ হতে দাবি করা হচ্ছে, ধর্ষণের পরেই জোরপূর্বক বিষপানে তাদের হত্যা করা হয়। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে রহস্য উদঘাটনের কাজ শুরু করেছে পুলিশ ও সিআইডির বিশেষ টিম।

এদিকে, পুলিশ সুপার জানান, সফট ড্রিংকস এর সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যা হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় রানাকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মস্তফাপুর বাজারের দর্জি দোকানি সূর্য বেগম জানান, বিকেলে আমি দোকানে এসে চিৎকারের শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি দুইটি ছেলে দুটি মেয়েকে অচেতন অবস্থায় কোলে তুলে ভ্যানে নিয়ে যাচ্ছে। অপর প্রত্যক্ষদর্শী দোকানি জাহাঙ্গীর নাগাছিও জানান একই কথা।
 
নিহত সুমাইয়ার মা আসমা বেগম জানান, আমার এক সুমাইয়া মারা গেছে। যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার হয় তাহলে হাজারো সুমাইয়া বেঁচে যাবে। আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যেন আমার সুমাইয়ার মতো কোন মেয়েকে অকালে প্রাণ হারাতে না হয়। নিহত হেপীর চাচি কেয়া বেগম ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

সুমাইয়ার বাবা বেল্লাল শিকদার দাবি করেন, তার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে।

মস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন খান জানান, গত তিন দিন ধরে তারা স্কুলে অনুপস্থিত। তবে তারা মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের মেয়ে ছিল।

ঘটনার পর শুক্রবার সকালে একই গ্রামের রানার মা সালমা বেগম এবং মেহেদির মা রহিমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে সদর থানার পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই মেহেদি ও রানাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা পলাতক আছে। ধারণা করা হচ্ছে এ ঘটনার সঙ্গে রানা ও মেহেদী জড়িত। রানা একই এলাকার শওকত খলিফার ছেলে এবং মেহেদী ফজজুল কবিরের ছেলে।

মাদারীপুর সদর থানার সেকেন্ড অফিসার ফায়েকুজ্জামান জানান, একই গ্রামের রানার সঙ্গে ওই দুই স্কুলছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে ত্রিভুজ প্রেমের ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। আর এরই জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে।  

তিনি আরো জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসা যুবকরা হলেন, মেহেদি ও রানা। গতকাল আটক শিপন ও রাকিব জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, মেহেদি ও রানা ওই দুই স্কুলছাত্রীকে ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে দেখে তারা হাসপাতালে আসে।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিকুল ইসলাম রাজিব জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে সুমাইয়ার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় সুমাইয়ার বাবা বেল্লাল শিকদার বাদি হয়ে রানা ও মেহেদীসহ ছয়জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, প্রাথমিক ময়নাতদন্তে জানা গেছে, সফট ড্রিংকস এর সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। এতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। আর মরদেহ ময়নাতদন্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস জানান, সুষ্ঠ তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে। যাতে কোন নিরহ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।

এ কে এম নাসিরুল হক/এআরএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।