অন্ধকারে নওগাঁর কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো
নওগাঁর পোরশা উপজেলার ১২টি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কোনোটিতেই বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। এসব ক্লিনিকগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সরকারের বরাদ্দ দেয়া ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবহারযোগ্য উপকরণ বিদ্যুতের অভাবে সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের যেমন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হচ্ছে তেমনি হাজার হাজার টাকার এসব যন্ত্রপাতি অকেজো হতে চলেছে।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠির হাতের নাগালে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় নওগাঁর পোরশা উপজেলাতেও ক্লিনিকগুলো নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর সরকার ওষুধ সরবরাহ, জনবল ও চিকিৎসক নিয়োগ করে। এরপর থেকে শুরু হয় স্বাস্থ্য সেবা।
প্রত্যন্ত এলাকা পোরশার নিতপুর, তেঁতুলিয়া, ছাওড়া, ঘাটনগর, গাঙ্গুরিয়া ও মর্শিদপুর ইউনিয়নে মোট ১২টি কমিউনিটি ক্লিনিক এলাকার অসহায়, দরিদ্র, দিনমজুর ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এর পাশাপাশি ওজন মাপা, উচ্চতা মাপা, নিরাপদ গর্ভধারণের জন্যে বিভিন্ন পরামর্শ, পোলিও টিকা ক্যাম্পিংসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের প্রাথমিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দিন দিন কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো এ অসহায় মানুষগুলোর কাছে স্বাস্থ্য সেবার অন্যমত প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠছে।
ক্লিনিকগুলো আরো জনপ্রিয়, কর্মমুখি ও আধুনিক করতে আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিটি ক্লিনিকে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ট্যাব, মডেমসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। কিন্তু উপজেলার ১২টি ক্লিনিকের কোনোটিতেই বিদ্যুৎ নেই।
বৃহস্পতিবার সকালে তেঁতুলিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা ঠনঠনিয়া গ্রামের কৃষক কাউসার মণ্ডলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জাগো নিউজকে জানান, হঠাৎ করে জ্বর দেখা দেয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রায় আট কিলোমিটার দূরে। সেখানে ওষুধ আনতে গেলে প্রায় সারা দিন নষ্ট হতো। কিন্তু বাড়ির কাজের ফাঁকে কমিউনিটি ক্লিনিকে এসে ওষুধ পেলাম।
শাহপাড়ার আনোয়ারা বেগম জাগো নিউজকে জানান, শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে কাজকর্ম করতে পারছি না। এখানে এসে ওষুধ পেলাম। স্কুলছাত্র সুব্রত কুমার জানায়, স্কুলে খেলার সময় পায়ে ব্যথা পাই। ব্যথার ওষুধ দিয়েছেন ডাক্তার। সহরন্দ্র কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা সহরন্দ্র গ্রামের কৃষক হারুন-উর-রশীদ জানান, বাড়ির পাশে ক্লিনিকটির যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলেও বিদ্যুৎ না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
তেঁতুলিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রভাইডার (সিএইচসিপি) খাইরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, ক্লিনিকের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ। বর্ষা মৌসুমে কাঁদাপানি ভেঙে আসতে হয়। এছাড়াও বিদ্যুৎ না থাকায় সরকারের দেওয়া যন্ত্রপাতি ব্যবহারে তাদের অসুবিধা হয়।
সহরন্দ্র কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রভাইডার (সিএইচসিপি) নজরুল ইসলাম জানান, ক্লিনিকগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সরকারের লক্ষ্য সঠিকভাবে অর্জিত হবে।
পোরশা (নীতপুর) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, ক্লিনিকগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকায় একদিকে যন্ত্রের যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হয় না তেমনি, সেবা নিতে আসা সাধারণত গরমের সময় দীর্ঘ সময় বসে থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ ছাড়াও বর্ষার দিনে মেঘলা থাকায় ও শীত মৌসুমে ক্লিনিকের ঘরগুলো অন্ধকার হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে তা বিদ্যুতের অভাবে বেশ কিছুটা ব্যহত হচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কাছে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেবার দাবি জানান।
১২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কোনোটিতেই বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মতিউর রহমান জাগো নিউজকে জানান, কোনো কোনো ক্লিনিকের পাশ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন চলে গেছে কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে ঊধ্বর্তন মহলকে জানানো হয়েছে।
এমজেড/এমএস