কথা দিচ্ছি সমুদ্রে নামব না


প্রকাশিত: ০২:৪৪ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০১৫

`ভাইয়া আমাদের টিকেট করা হয়ে গেছে শুক্রবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেব। বিকেলে আমরা রামুর মন্দিরগুলো দেখতে যাবার পরিকল্পনা করেছি। কথা দিচ্ছি সমুদ্রে নামব না।`

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বড় ভাই দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে এসব কথা বলেন সুমন আহমেদ (২৫)। কিন্তু এ কথা তিনি রাখতে পারলেন না। কথা বলার দুই ঘণ্টার মাথায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঢেউ আলিঙ্গন করতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হলো সুমনকে।

তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরের বাগরা এলাকার মরহুম আবুল কাশেম মোড়লের ছেলে। গত তিন দিন আগে চার বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছিলেন তিনি।
 
সাগরের লাবণী পয়েন্ট থেকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন রবি লাইফ গার্ডের ইনচার্জ ছৈয়দ নুর।

সুমনের বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন মুঠোফোনে জাগো নিউজকে জানান, খবরের কাগজ ও টিভিতে সমুদ্রে গোসল করতে গিয়ে শিক্ষার্থীসহ অনেকের মৃত্যুর খবর দেখে মনটা অহেতুক আনচান করে উঠত। অজানা একটা ভয় তাড়িয়ে বেড়াতো। তাই ছয় ভাইয়ের মাঝে সবার ছোট আদরের সুমন কক্সবাজার যাবারকালে বারবার বারণ করেছি সাগরে পা ভেজাবি না।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকেও মোবাইলে কথা হয়। তারা শুক্রবার চলে আসার জন্য টিকেট কেটেছে এবং বিকেলে রামু দেখতে যাবে বলে জানায়। তখনো সমুদ্রে নামতে নিষেধ করা হয়। ভাইটা কথাও দিয়েছিল। কিন্তু হয়তো সমুদ্র ছুঁয়ে দেখার লোভ সামলাতে না পেরে দেয়া কথা রাখতে পারলো না। সেই বুক আনচান করা খবর হয়ে গেল আমার আদরের ছোট ভাইটি।

কথা শেষ করতে পারেনি তিনি। আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন দেলোয়ার। এ সময় তার বাড়িতে স্বজনদের কান্নার রোল শুনা যায়।
 
নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি আরো বলেন, ঢাকার তেজগাঁও কলেজ থেকে বিএ পাশ করা সুমন অন্য ভাইদের সঙ্গে পারিবারিক ব্যবসা সামলাতেন। অনেকদিন থেকে কক্সবাজার বেড়াতে আসার বায়না করছিল। সময় সুযোগ হয়ে না উঠায় এতদিন যাওয়া হয়নি। তার কাছের বন্ধুরা মিলে তিনদিন আগে কক্সবাজার যান। তাদের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ হলেও মতিঝিলে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান, সি-ইন পয়েন্টে গোসল করতে নামলেও স্রোতের টানে সুমন লাবণী পয়েন্টের দিকে চলে আসে। এটি দেখতে পেয়ে লাইফ গার্ড কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়।

সায়ীদ আলমগীর/এআরএ/এমআরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।