পঞ্চগড়-১ আসনে নৌকা পেতে মাঠে নেমেছেন অনেকেই

সফিকুল আলম
সফিকুল আলম সফিকুল আলম , জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ০৫:০৮ পিএম, ০৩ অক্টোবর ২০১৮

পঞ্চগড়-১ আসনে কে হবেন নৌকার মাঝি? এনিয়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের মধ্যে চলছে নানান আলোচনা। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মজাহারুল হক প্রধান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদত সম্রাট এবং আওয়ামী লীগ নেতা নাইমুজ্জামান মুক্তা এই আসনে নৌকার মাঝি হতে মরিয়া।

দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে অনেকে তিন নেতার পক্ষেই গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। আবার মহাজোটের হয়ে নৌকার হাল ধরতে প্রস্তুত বর্তমান সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধানও।

জেলার তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী ও সদর উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী আসন পঞ্চগড়-১। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট। আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন দাখিলের পর হাই কমান্ডের বিশেষ নির্দেশে বাধ্য হয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন তৎকালীন সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান।

এই সুযোগে লাঙল প্রতীকের প্রার্থী আবু সালেকের সঙ্গে মশাল প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধ শুরু করেন নাজমুল হক প্রধান। তবে আওয়ামী লীগের ছাড় দেয়ার সুযোগটি নিতে পারেননি জাতীয় পার্টি মনোনিত প্রার্থী আবু সালেক। নির্বাচনী মাঠে নৌকা না থাকায় লাঙল ঠেকিয়ে মশাল নিয়েই নির্বাচনী বৈতরণী পার করেন ৯০ দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা নাজমুল হক প্রধান। তিনি প্রথম বারের মতো পঞ্চগড়-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সাল থেকে পঞ্চগড়-১ আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারকে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিক মজাহারুল হক প্রধান। আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌঁড়ে তিনি এগিয়ে রয়েছেন। প্রায় প্রতিদিন নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণসংযোগ করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে ইউনিয়ন পর্যায়ে দলীয় ব্যানারে উঠান বৈঠক করছেন। পাশাপাশি কেন্দ্রের নীতি নির্ধারক পর্যায়েও নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. মজাহারুল হক প্রধান বলেন, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। প্রায় ৩৪ বছর পর পঞ্চগড়-১ আসনটি আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পেরেছি। এরপর ৫ বছর আমি এলাকার মানুষের জন্য নিরলস কাজ করেছি। এজন্য ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনেও আমাকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তবে শেষ মুহূর্তে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ফোন করে দেশ ও জনগণের স্বার্থে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলেন। দলের একজন নিবেদিত হয়ে আমি সেই নির্দেশটি পালন করি। তবুও আমি তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় কাজ করে যাই। এজন্য এখনও মাঠেই আছি। দলীয় কাজ এবং জনসেবা ছাড়া আমার আর কিছু নেই। এখানকার মানুষ আমার সঙ্গে আছে। যেহেতু আমি আমার মনোনয়নটি প্রত্যাহার করে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে দিয়েছি, এ কারণে আমি মনে করি এবার তিনি আমাকেই মনোনয়ন দেবেন।

এদিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের মনোনয়ন এবং নৌকা প্রতীক পেতে মরিয়া একাধিক প্রার্থী। তাদের অনেকে এলাকায় গণসংযোগসহ উপর মহলে দৌঁড়ঝাপ অব্যাহত রেখেছেন। এদের মধ্যে দৌঁড়ের প্রথম সারিতে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট এবং এক সময়ের বাম ঘরানার ছাত্রনেতা ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের জনপ্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ নাইমুজ্জামান মুক্তা।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দুজনই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারাও কেন্দ্রে যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করে চলেছেন। নিয়মিত এলাকায় শো-ডাউন করছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, একটা সময় ছিল আমরা পঞ্চগড়ের মানুষ অবহেলিত ছিলাম। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর পঞ্চগড়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমি নির্বাচিত হয়ে ৫ বছর সফলভাবে সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর জনগণের ভোটে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। আমি দলীয় নেতাকর্মীদের সমর্থনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাসহ এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিলে সাধারণ মানুষের সমর্থনে আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবো বলে আশা করি।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নাইমুজ্জামান মুক্তা বলেন, তরুণ প্রজন্ম এবং স্থানীয় গণমানুষের ভালোবাসাই আমার ভরসা। আওয়ামী লীগের একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনোনয়ন চাইবো। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সারা দেশে যেমন কাজ করেছি, নিজের জেলাতেও এ নিয়ে অনেক কাজ করেছি। এজন্য পঞ্চগড় জেলা ডিজিটাল কার্যক্রমে পরপর ৩ বার জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠ হয়েছে। সততা এবং যোগ্যতা দিয়ে স্থানীয়ভাবে অনেক কাজ করেছি। এছাড়া জননেত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে তরুণ নেতৃত্ব খুঁজছেন। এজন্য আমি মনে করি, আগামী দিনে ক্লিন ইমেজ এবং তরুণ নেতৃত্ব খুঁজলে আওয়ামী লীগ আমার প্রতি আস্থা রাখবে।

এদিকে বসে নেই বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হক প্রধান। তিনিও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে গণসংযোগ করছেন। সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। আসন্ন নির্বাচন দেশের স্বার্থে জোটগতভাবেই হবে এবং এই আসনে তিনি বাংলাদেশ জাসদের হয়ে মহাজোটের হয়ে নৌকার হাল ধরবেন বলে মনে করেন।

বর্তমান সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান বলেন, বিএনপি জামায়াত জোটের আমলে দেশটি মূলত পাকিস্তানি ধারায় চলে গিয়েছিল। দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটছিল। জঙ্গিবাদ মূলোৎপাটন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ গড়ার লক্ষে মূলত ১৪ দলীয় জোট গঠন হয়। পরে তা মহাজোটে রুপান্তরিত হয়। জোটগতভাবে দেশ থেকে জঙ্গিবাদ বিতারিত করার কাজ এখনও চলছে। সেই প্রক্রিয়ায় আসন্ন নির্বাচন জোটবদ্ধভাবে হবে বলেন আশা করি। এছাড়া বর্তমান সরকারের হয়ে আমি স্থানীয়ভাবে অনেক উন্নয়ন করেছি। এজন্য মহাজোটের শরিক হয়ে এই আসনে মহাজোটের প্রতীকের আমি একমাত্র দাবিদার।

এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

আরও পড়ুন