সরব আ.লীগ, নীরব বিএনপি

সালাউদ্দীন কাজল
সালাউদ্দীন কাজল সালাউদ্দীন কাজল চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: ০১:১৩ পিএম, ০৩ অক্টোবর ২০১৮

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিন্দ্বন্দ্বী এখন আওয়ামী লীগই। বিগত এক বছর ধরে আওয়ামী লীগের হাফ ডজন প্রার্থীর মাঠে সরব উপস্থিতি রয়েছে। তবে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এখনও নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করতে পারেনি।

আওয়ামী লীগের ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩ জনই দলে নবাগত। যারা কর্মীদের মাঝে বেশ অর্থ ব্যয় করছেন। আর এ কারণে অনেক কর্মী তাদের পিছে ছুটছেন বলে শোনা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এ আসনে বেশিরভাগ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিভিন্ন জনসভা ও পথসভায় বর্তমান এমপির নেতিবাচক কাজের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠছেন।

তবে এমপি আলী আজগার টগর বলছেন, বিএনপি ও তার দোসরদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগের কিছু নবাগত কর্মী তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এদিকে বিএনপির দুইজন ও জামায়াতে ইসলামীর একজন প্রার্থী একাদশ সংসদ নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে মামলার ভয়ে তারা কেউই নির্বাচনী গণসংযোগ করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন। শুধুমাত্র ব্যানার ফেস্টুন টাঙানোর মধ্যেই তাদের প্রচার-প্রচারণা সীমাবদ্ধ রয়েছে।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী আজগর টগর, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মনজু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল মল্লিক, হাশেম রেজা ও সাদিকুর রহমান বকুল।

অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির উপ-কোষাধ্যক্ষ জেলা বিনএপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান খান বাবু, জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু।

এছাড়া জেলা জামায়াতে ইসলামির সেক্রেটারি রুহুল আমিন।

দামুড়হুদা, জীবননগর উপজেলা ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর, তিতুদহ ইউনিয়ন নিয়ে চুয়াডাঙ্গা-২ আসন গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৮৮৯ জন। আসনটি এক সময় বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আসনটি নিজেদের কব্জায় নেন। তাই হারানো আসন ফিরে পেতে চায় বিএনপি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ আসনটি ধরে রাখতে চায়।

২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হন জামায়াত নেতা মাওলানা হাবিবুর রহমান। তাকে প্রায় ১৩ হাজার ভোটে হারিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রথম বিজয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মহাজোট প্রার্থী শিল্পপতি আলী আজগর টগর। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ছয় জন প্রার্থী মাঠে থাকায় কদর বাড়ছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী আলী আজগর টগর।

তিনি বলেন, এক সময় এটা সন্ত্রাসের জনপদ ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় মানুষ এখন দরজা খুলে ঘুমাতে পারে। বড় দলে একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন চায়তেই পারেন। তবে নৌকার টিকিট যেই পাক, আমরা তার পক্ষে কাজ করব।

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগে যে ক’জন স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের নেতা রয়েছেন মাহফুজুর রহমান মনজু তাদের মধ্যে অন্যতম। চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মনজু বলেন, আওয়ামী লীগের টিকিটে আমি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করি। তবে পেশি শক্তি ও কালো টাকার জোরে আমাকে কৌশলে হারিয়ে দিয়েছে। জেলা পরিষদের প্রশাসক থাকাকালে এলাকার উন্নয়নে আমি ভূমিকা রেখেছি। এজন্য সাধারণ জনগণ আমার পাশে রয়েছে, দলীয় মনোনয়ন পেলে আমি নিশ্চিত জয়লাভ করব।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দামুড়হুদা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আজাদুল ইসলাম আজাদ এবারও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তবে তাকে গণসংযোগ ও মাঠে ময়দানে তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে ‘দৈনিক আমার সংবাদ’র সম্পাদক হাশেম রেজা প্রায় বছর খানেক আগে থেকে পথসভা ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এছাড়া অনেকটা হঠাৎ করেই মাঠে নেমেছেন ব্যবসায়ী নজরুল মল্লিক। আলোচিত এই নজরুল মল্লিক ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে নিজেকে আসীন করেছেন। তিনিও নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিশু কিশোর মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমান বকুলও সম্প্রতি সংবাদ সন্মেলন করে চুয়াডাঙ্গা-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান।

অপরদিকে ‘দৈনিক আজকের নতুন খবর’র সম্পাদক ও প্রকাশক বকুল ব্যতিক্রমী কায়দায় প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় শিশু-কিশোর মঞ্চ’ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০১৮ চালু করেছেন। সেখানে উপস্থিত ফুটবল অনুরাগীদের কাছে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকার মাঝি হতে চান।

এছাড়া সারাদেশে বিএনপির যে কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন তাদের মধ্যে মাহমুদ হাসান খান বাবু অন্যতম। কেন্দ্রীয় বিএনপির উপ-কোষাধ্যক্ষ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু। ইতোমধ্যে তিনি এলাকায় ক্লিন রাজনীতিবিদ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। তিনি এলাকায় দলীয় কার্যক্রমে নিজের অবস্থান মজবুত রেখেছেন। দলের মধ্যে বিরোধ মেটানোর উদ্যোগও তিনিই গ্রহণ করেছেন।

এছাড়া জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোখলেসুর রহমান তরফদার টিপু দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঝে মাঝেই পথসভা করছেন। ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে চাচ্ছেন জনগণের দোয়া।

অপরদিকে জেলা জামায়াত সেক্রেটারি রুহুল আমিন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে জনগণের মাঝে নিজেকে জানান দিচ্ছেন।

এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।