অরক্ষিত ৪ জেলার নৌপথ: বাড়ছে অপরাধ


প্রকাশিত: ০৯:২৯ এএম, ১৩ আগস্ট ২০১৫

অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে জামালপুরসহ চার জেলার নৌপথ। জামালপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও বগুড়া জেলার যমুনাতীরের মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে নিত্যদিন পারাপার হচ্ছেন যমুনার বিশাল নৌপথ। প্রায়ই ঘটছে ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা ঘটনা। নদী তীরে নৌ-থানা না থাকায় পুলিশি টহলের অভাবে মাদকপাচারের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে বিশাল যমুনার এ নৌপথ।   

যমুনা তীরের জেলা জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও বগুড়ার সারিয়াকান্দি এলাকার অসংখ্য মানুষকে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন নৌপথে পারাপার হতে হয়। এক সময় উত্তরের এসব জেলাগুলোর সঙ্গে জামালপুরসহ দেশের মধ্যাঞ্চলের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল রেল ও স্টিমার। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু চালু হবার পর বাহাদুরাবাদ-বালাসি ঘাটের মধ্যে রেল ও স্টিমার বন্ধ হয়ে যাবার পর থেকে এখন চার জেলার মানুষের নৌপথে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা।

প্রতিদিন চার জেলার অসংখ্য মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা প্রয়োজনে নৌকায় পারাপার হন। আর যমুনার এ বিশাল নৌপথ পারাপার হতে গিয়ে যাত্রীদের প্রায়ই শিকার হতে হয় ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা ঘটনার। রেল ও স্টিমার কেন্দ্রীক যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ১৯৭৬ সালে বাহাদুরাবাদ ঘাটে স্থাপন করা হয় ভাসমান নৌ-থানা। কিন্ত স্টিমার বন্ধ হবার পর ভাসমান থানাটি সরিয়ে নেয়া হয় ডাঙ্গায়। সেখানে নৌ-থানার জন্য ভবন নির্মাণও করা হয়।



কিন্তু ২০০৯ সালে  যমুনার ভাঙনে নৌ-থানার ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হলে থানার কর্মরত পুলিশরা আশ্রয় নেন নদীর তীর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে ইসলামপুর উপজেলার মলমগঞ্জ মডেল কলেজ ভবনে। স্পিডবোর্ডসহ এ থানার নৌ-অপরাধ প্রতিরোধের কোনো সরঞ্জামই নেই। ফলে নৌ ডাকাতি, ছিনতাই রোধে এ থানা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদীর অভাবে বিশাল যমুনায় পুলিশি টহল যথাযথ না থাকায় মাদক পাচারের নিরাপদ রুটে পরিণত যমুনার এই নৌপথ। আর যমুনা তীরবর্তী চরগুলো এখন পরিণত হয়েছে মাদক চোরাচালানকারীদের অভয়ারণ্যে।

ভারতীয় সীমান্ত ঘেষা উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে আসা ভারতীয় মদ, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য চোরাচালানকারীরা সহজেই বিশাল যমুনার নৌপথ পাড়ি দিয়ে জামালপুর জেলাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে নৌথানা পুলিশ মাঝে মধ্যে ডাকাতসহ মাদক চোরাচালানকারীদের ধরতে যমুনা নদীতে অভিযান চালালেও অপরাধীদের দ্রুতগতির নৌযানের চাইতে অপেক্ষাকৃত দুর্বলগতির নৌযান হওয়ায় অপরাধীদের ধরা সম্ভব হয়ে ওঠেনা নৌ পুলিশদের। ফলে বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে সহজেই নিরাপদ স্থানে চলে যেতে সক্ষম হচ্ছে অপরাধীরা।



গাইবান্ধার ফুলছড়ি ইউনিয়নের ইউনিয়ন মেম্বার জালাল উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, নৌকাযোগে যমুনা পাড়ি দিয়ে জামালপুর হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে হয়। নৌপথে যাতায়াতকালে মাঝে মধ্যেই ডাকাতের কবলে পড়তে হয় আমাদের। মাঝে পুলিশ কিছু ডাকাত ধরলেও নদীতীরবর্তী চরগুলোতে নতুন করে ডাকাত জন্ম নেওয়ায় আবারো ডাকাতি বেড়ে গেছে।
   
জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. নিজাম উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, সম্প্রতি নৌডাকাতদের একটি চক্রকে গ্রেফতার করায় জামালপুর অঞ্চলে অপরাধ কমে এসেছে। স্থায়ী নৌথানা প্রতিষ্ঠার জন্য ইতোমধ্যেই বাহাদুরাবাদ এলাকায় পাঁচ একর জমি নেওয়া হয়েছে এবং ওই স্থানে মাটি ভরাটের কাজ চলছে। নৌথানা প্রতিষ্ঠা হলে নৌ ডাকাতি বন্ধ হবে।

শুভ্র মেহেদী/এমজেড/এমআরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।