রোকসানাকে দেখলেই আঁতকে উঠবেন যে কেউ

মাহাবুর আলম সোহাগ
মাহাবুর আলম সোহাগ মাহাবুর আলম সোহাগ , সহকারী বার্তা সম্পাদক (কান্ট্রি ইনচার্জ)
প্রকাশিত: ১০:১৮ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

১২ বছর বয়সী রোকসানার জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছে রাজধানীর ওয়ারী এলাকার পাষণ্ড এক দম্পতি। ধর্ষণ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, না খেয়ে রাখাসহ এমন কোনো নির্যাতন বাদ ছিল না, যা করা হয়নি তার ওপর। গত আট মাস ধরে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়া পচে গেছে তার। সেইসঙ্গে শরীরের চামড়া তার হাড়গুলোকে লেপ্টে ধরেছে। প্রথম দেখাতেই যে কেউ ভেবে বসবে এটি একটি জীবন্ত কঙ্কাল। এছাড়াও সারা শরীরে ক্ষতস্থানের শেষ নেই। সেই দাগগুলোই স্পস্ট করে দিয়েছে কী কী কৌশলে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।

রোকসানা বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিটের ২য় তলার (আইসিইউ) শিশু ওয়ার্ডের ৯ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন।

jagonews

গত ২০ দিন ধরে রোকসানার চিকিৎসা ও তাকে নির্যাতনকারীদের বিচারের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছেন ঢাকায় বসবাসকারী নড়াইলের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম লিটু। বিষয়টি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় অনেকেই রোকসানার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। ইতোমধ্যে তাকে আইনি ও চিকিৎসা সহায়তাও দেয়া শুরু হয়েছে।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও অসহায় রোকসানাকে দেখতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেলে হাজির হন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। এ সময় তিনি রোকসানার উন্নত চিকিৎসার ব্যাপারে বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক মাহবুবের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করেন।

তিনি জানান, রোকসানাকে যারা নির্যাতন করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যেন অন্য কেউ এমন সাহস না পায়।

জাকির বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অসংখ্য মানবিক কাজ করেছে এবং করছে। সারাদেশে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের সাধ্যমতো অসহায় মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করছে। তিনি রোকসানার পাশে হৃদয়বানদের দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

jagonews

বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক মাহবুব বলেন, রোকসানার চামড়ার ইনফেকশন রয়েছে। পুষ্টিহীনতায় ভুগছে সে। তার ব্রেইনেরও সমস্যা রয়েছে।

ঢাকায় শিশু রোকসানার দায়িত্বে থাকা নড়াইলের আমিরুল ইসলাম লিটু জানান, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি রোকসানাকে বাঁচাতে। জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে? তিনি বলেন, রোকসানার চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার নিলে হয়তো আরও উন্নত চিকিৎসা হত তার।

প্রসঙ্গত, ৮ মাস আগে ঢাকার ওয়ারী এলাকার ইলিয়াস হোসেন পলাশ নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে টুকিটাকি কাজ করার কথা বলে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার বাহিরপাড়া গ্রাম থেকে একটি অসহায় পরিবারকে ভুল বুঝিয়ে রোকসানাকে নিয়ে আসে তার স্ত্রী সোনিয়া। এরপর মাসে এক থেকে দুই বার ৬ মাস বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে দিলেও পরের দুই মাস রোকসানাকে কোনো যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। এমনটি জানালো রোকসানার বাবা রাসেল শেখ।

jagonews

এ ঘটনায় গত ২২ আগস্ট অভিযুক্ত ইলিয়াস হোসেন, তার স্ত্রী সোনিয়া, সোনিয়ার ভাই ইব্রাহিম ও সরবরাহকারী সালেহা বেগমের নাম উল্লেখ করে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়ের করেন রোকসানা বাবা রাসেল শেখ।

গত ১১ সেপ্টেম্বর নড়াইল আদালতে হাজির হন গৃহকর্ত্রী সোনিয়া। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। নড়াইল চিফ জুডিশিয়াল আদালতের বিচারক (লোহাগড়া আমলি আদালত) মো. জাহিদুল আজাদ এই রায় দেন।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।