তাজিয়া মিছিলের অনুমতি চায় গড়পাড়া ইমামবাড়ি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৯:৫৩ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে মানিকগঞ্জের গড়পাড়া ইমামবাড়ি থেকে প্রতিবছর বের হয় দেশের অন্যতম বৃহৎ তাজিয়া মিছিল। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মিছিলকে ঘিরে এবারও ইমামবাড়ির পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্ততি। তবে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে শোক সভা করার অনুমতি মিললেও তাজিয়া মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণের অনুমতি মেলেনি।

সোমবার দুপুরে ইমামবাড়িতে মহররমের প্রস্ততি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।

সভায় গড়পাড়া ইমামবাড়ি দরবার শরীফের বর্তমান খাদেম শাহ মোখলেছুর রহমান,পীরজাদা ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক আরিফুর রহমান বাবু,পীরজাদা শাহজাদা রহমান বাঁধন ও তাজিনুর রহমান তাজ বক্তব্য দেন।

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, ১৯২১ সালে গড়পাড়া ইমাম বাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৪ সাল থেকে মহররমের শোক মিছিল বের হয়। পবিত্র আশুরার দিন গড়পাড়া ইমামবাড়ি থেকে কারবালা প্রান্তরের নানা প্রতীক নিয়ে কয়েক হাজার মানুষের অংশগ্রহণে বের হওয়া তাজিয়া মিছিলটি মানিকগঞ্জ শহর প্রদক্ষিণ করে আসছিল। দেশের অন্যতম বৃহৎ এই তাজিয়া মিছিল দেখতে রাস্তার দুই পাশে অপেক্ষা করে হাজারো দর্শক, ভক্ত, অনুরাগী। কিন্তু বিগত তিন বছর ধরে ইমামবাড়ির শোক র‌্যালি নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করতে দেয়া হচ্ছে না।

Manik

আরিফুর রহমান বাবু মতবিনিময় সভায় বলেন, গড়পাড়া ইমাম বাড়ির শোক র‌্যালিটি জেলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আচার-আচরণের প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রশাসনের নির্দেশে বর্তমানে মিছিলে দা, রামদা, তলোয়ার ব্যবহার করা হয় না। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে মিছিলটি সম্পন্ন হয়। তারপরও বিগত তিন বছর ধরে নিরাপত্তার অজুহাতে মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণে বাধা দেয়া হচ্ছে। তিনি মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণের অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।

ইমামবাড়ি দরবার শরীফের বর্তমান পীর ও পাক পাঞ্জাতন অনুসারী পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি শাহ মোখলেছুর রহমান বলেন, অনেকে মনে করেন আশুরার আনুষ্ঠানিকতা শুধুমাত্র সিয়া অনুসারীরাই পালন করেন। এটা ভুল ধারণা, সুন্নিরাও পালন করেন। ইমামবাড়িতে বংশপরমপরায় শত বছর ধরে সুন্নি অনুসারীরাই পবিত্র আশুরা পালন করে আসছেন। এই আয়োজনে স্থানীয় হিন্দুধর্মাবলম্বীসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ অংশ নেন। কাজেই আশুরার অনুষ্ঠান মানেই শিয়াদের সম্পৃক্ততা এমনটা মনে করার কোনো কারন নেই। যারা শিয়া-সুন্নিদের মধ্যে ভেদাভেদ, দ্বন্দ্ব তৈরি করে তারা শিয়া-সুন্নি কেউ নয় তারা ইসলামের শত্রু।

তিনি গড়পাড়া ইমামবাড়ির ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এবং শোক র‌্যালিটি আগের মতো শহর প্রদক্ষিণ করার ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।

প্রসঙ্গত, মহরমের প্রথম দিন মানিকগঞ্জের গড়পাড়া ইমাম বাড়ি থেকে ২৮টি কাসেদের দল ফরিদপুর, রাজবাড়ি, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে মহররমের তাৎপর্য তুলে ধরে জারি, মার্সিয়া পরিবেশনসহ নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন। পবিত্র আশুরার দিন ইমামবাড়িতে আবার ফিরে আসে কাসেদের দল গুলো। এরপর দুপুর থেকে শুরু হয় তাজিয়া মিছিলের প্রস্ততি। বিকেলে তাজিয়া তাবুত, সিপার, দুলদুল আর কারবালার স্মৃতিবহনকারী হাজার হাজার লাল-সবুজ আর কালো নিশান নিয়ে মিছিলে অংশগ্রহলণকারী হাজারো মানুষের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় হায় হোসেন…হায় হোসেন।

বি.এম খোরশেদ/আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।