৩ দিন ধরে হাসপাতালে আসেন না সেই চিকিৎসক
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় সুস্থ শিশুকে অসুস্থ দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা নিয়ে দুই চিকিৎসকের কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর থেকে বেসরকারি অরবিট হাসপাতালে চিকিৎসক খায়রুল বাশার আত্মগোপনে রয়েছেন। গত তিন দিন ধরে হাসপাতালে আসছেন না তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ নেই তার।
স্থানীয়দের দাবি, বিষয়টি আড়াল করতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই চিকিৎসককে কয়েকদিন আসতে নিষেধ করেছেন। স্থানীয়রা একজন চিকিৎসকের এ ধরনের কাজের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।
এদিকে, এ ঘটনায় আবারও নতুন করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগের কমিটি বাতিল করে জেলা সিভিল সার্জন সুচিন্ত চৌধুরী বুধবার এ কমিটি গঠন করেন।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়ে গঠিত এ কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের কনসালট্যান্ট আশরাফ উদ্দিনকে নতুন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে।
কমিটির সদস্যরা হলেন- বানিয়াচং উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবুল হাদী শাহ পরান ও নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা।
সিভিল সার্জন সুচিন্ত চৌধুরী বলেন, অভিযুক্ত চিকিৎসক এএইচএম খায়রুল বাশার সিনিয়র হওয়ায় জুনিয়র দিয়ে তদন্ত না করার বিধান রয়েছে। তাই আগের কমিটি বাতিল করে নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের ফুলতলী বাজার এলাকার বাসিন্দা রুবেল মিয়া ও শিরিন আক্তারের ৪০ দিন বয়সী শিশু ইসমত নাহার ঘনঘন হেঁচকি দিচ্ছিল। গত ৩১ আগস্ট সকালে শিশুটিকে নিয়ে স্থানীয় আউশকান্দি বাজারের অরবিট হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু রোগ চিকিৎসক এএইচএম খায়রুল বাশারের কাছে যান মা শিরিন আক্তার।
চিকিৎসক এএইচএম খায়রুল বাশার ৫০০ টাকা ভিজিট রেখে কিছু ওষুধ লিখে দেন এবং পরদিন শিশুর অবস্থা জানানোর পরামর্শ দেন।
পরদিন শিশুটি আগের মতোই রয়েছে এ কথা জানালে চিকিৎসক খায়রুল বাশার শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান। সেই সঙ্গে দ্রুত শিশুটিকে মৌলভীবাজারের মামুন হাসপাতালে ভর্তি করে সেখানের চিকিৎসক বিশ্বজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
সেখানে গিয়ে চিকিৎসক বিশ্বজিতের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দেয়ার জন্য ওই শিশুর মাকে বলেন খায়রুল বাশার। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকলেও শিশুর প্রাণ রক্ষায় দ্রুত মৌলভীবাজার ছুটে যান শিশুর মা শিরিন আক্তার।
সেখানে যাওয়ার পর খোঁজে বের করেন চিকিৎসক বিশ্বজিতকে। পাশাপাশি শিরিন আক্তারের মোবাইলে বিশ্বজিতের সঙ্গে কথা বলেন চিকিৎসক খায়রুল বাশার। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক বিশ্বজিত মোবাইলে চিকিৎসক খায়রুল বাশারকে বলেন, শিশুটি পুরোপুরি সুস্থ আছে। এরপরও সুস্থ শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার জন্য বলেন চিকিৎসক খায়রুল বাশার।
তার কথা অনুযায়ী রাতেই ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে। দুই চিকিৎসকের মোবাইলে কথোপকথনের বিষয়টি দেখে শিশুর মা শিরিন আক্তারের মনে সন্দেহ জাগে। শিরিন আক্তারের মোবাইলে তখন কল রেকর্ড চালু ছিল। কিন্তু বিষয়টি জানতেন না দুই চিকিৎসক।
পরে চিকিৎসক বিশ্বজিত ও খায়রুল বাশারের ফোনে কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়ে যায়। এ নিয়ে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এরপরই স্বাস্থ্য বিভাগ নড়েচড়ে বসে। বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করে তারা। অবশেষে সেই কমিটি বাতিল করে আবারও কমিটি গঠন করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত চিকিৎসক খায়রুল বাশারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ বিন হাসান বলেন, সিভিল সার্জন অফিস থেকে নেয়া অরবিট হাসপাতালের অনুমতির কাগজের মেয়াদ ২০১৭ সালের অক্টোবরে শেষ হয়েছে। তারা আবার আবেদন করেছে। সেটি নাকি তাদের প্রক্রিয়াধীন আছে। সিভিল সার্জন অফিসকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি আমি। কাগজে ত্রুটি থাকলে যেন তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেন। আর চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করবে নতুন কমিটি।
জানতে চাইলে অরবিট হাসপাতালের পরিচালক মহিবুর রহমান হারুন বলেন, চিকিৎসক খায়রুল বাশার এই হাসপাতালে প্রায় ১২ বছর ধরে চিকিৎসা দিচ্ছেন। যে রোগী অভিযোগ তুলেছেন তিনি অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আমার এখানে ভর্তি হয়নি। চিকিৎসক বাশার যদি অন্যায় করে থাকেন তাহলে চিকিৎসক অ্যাসোসিয়েশন বিষয়টি দেখবে। এটি দেখার বিষয় আমার নয়।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এএম/জেআইএম