‘জীবনহানিই’ মাদক দমনে কার্যকর পথ : সিএমপি
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) মো. মাহাবুবর রহমান মনে করেন মাদক ব্যবসায়ী নির্মূলে ‘জীবনহানিই মাদক দমনে কার্যকর পথ।’ তিনি বলেন, ধর্মীয় উপদেশেও কাজ হবে না। বড় ভাই বলে মাথায় হাত বুলিয়েও কাজ হবে না। সবচেয়ে বড় কাজ হবে যেটা হচ্ছে—জীবনহানি। বাস্তব অর্থে জীবনহানি। এটাই সবচেয়ে কার্যকর পথ।
মঙ্গলবার (০৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরের মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা কমিউনিটি পুলিশ আয়োজিত মাদকবিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সিএমপি কমিশনার মাহবুবর বলেন, ‘আদেশ-উপদেশ দিয়ে নয়, মাদক ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। বাংলাদেশকে ইয়াবার মাধ্যমে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। শান্তির জন্য অশান্তি সৃষ্টিকারীর জীবনহানি হতে পারে। মাদক ব্যবসায়ীরা অস্ত্র হাতে নিয়ে আমাদের মোকাবেলা করতে চায়, আমাদের হাতেও অস্ত্রও আছে। সেই অস্ত্র ব্যবহারের অধিকার আমাদের আছে। সুতরাং মাদক নিয়ন্ত্রণে জীবনহানি হতে পারে।’
সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত মে মাসের শুরুতে দেশে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। এতে দুই শতাধিক ‘মাদক বিক্রেতার’ প্রাণহানির তথ্য দিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। এছাড়া গ্রেফতার হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি। বড়ভাই হয়ে মাদক বিক্রেতার মাথায় হাত রেখে বোঝালে কাজ হবে না। কারণ পঞ্চাশ টাকা দিয়ে ইয়াবা এনে পাঁচশ টাকায় বিক্রি করতে পারলে সে ব্যবসা কোনোদিনই ছাড়ার প্রশ্ন আসে না। এই ব্যবসা করতে গিয়ে যদি তার জীবনহানির আশঙ্কা থাকে, জীবন বিপন্নের আশঙ্কা থাকে তবেই সে এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে পারে।’
বিজিবি ও কোস্টগার্ডকেও দায় নিতে হবে
মাদকবিরোধী সমাবেশে সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান বলেছেন, ‘সব দোষ পুলিশের ওপর চাপিয়ে দিলে হবে না। মাদকে ব্যর্থতার দায় বিজিবি ও কোস্টগার্ডকেও নিতে হবে। কেননা ১২০ কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে বিজিবি-কোস্টগার্ড কঠোর হলে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সহজ হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘১২০ কিলোমিটার সীমান্ত যদি আমরা রক্ষা করতে পারতাম, তাহলে ইয়াবা দেশে ছড়িয়ে পড়ত না। সীমান্তের একটি পয়েন্টে যদি ১০ লাখ ইয়াবা ঠেকানো যেত, তাহলে সেগুলো ১০০ জায়গায় ছড়িয়ে পড়ত না। এক পয়েন্টে ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ সহজ নাকি ১০০ পয়েন্টে?
ইয়াবা ব্যবসায় পুলিশের জড়িয়ে পড়া কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেয়ার পর তিনজন এসআইকে হাতকড়া পরিয়ে জেলে পাঠিয়েছি। আমার অবস্থান স্পষ্ট- যে বা যারা ইয়াবার সঙ্গে যুক্ত তারা পুলিশের কেউ না। পুলিশ ব্যর্থ হতে পারে, কিন্তু ইয়াবার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে না। ইয়াবা ব্যবসা করতে হলে পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিতে হবে।'
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম, উপ-কমিশনার এসএম মোস্তাইন হোসাইন, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, চট্টগ্রাম মহানগর কমিউনিটি পুলিশের সদস্য সচিব অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা।
এসআর/পিআর