ওই মেয়েটিকে আমি ভালোবাসি
বগুড়ায় কলেজছাত্রীকে তুলে নিয়ে গোপনাঙ্গে ছুরিকাঘাত মামলার আসামি শহর যুবলীগ সভাপতির ছেলে কাওসার আলম অভি (২২) পুলিশি রিমান্ডে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করেছে।
পাশাপাশি অভি বলেছে, নির্যাতিত ওই মেয়েটিকে আমি ভালোবাসি। কিন্তু ওই মেয়ে অন্য এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে আমি এমন কাণ্ড ঘটিয়েছি।
এর আগে সোমবার বিকেলে অভিকে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর ফরিদ উদ্দিন বলেন, শুনানি শেষে তার ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। মঙ্গলবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বুধবার তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে। এর আগে বগুড়া শহর যুবলীগ সভাপতির ছেলে কাওসার আলম অভি (২২) তার মা নাসরিন আলমকে সঙ্গে নিয়ে সদর থানায় আত্মসমর্পণ করেছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, অভি বগুড়ার অপরাধ জগতের সঙ্গে জড়িত। প্রভাবশালী পরিবারের ছেলে হওয়ায় তার মধ্যে সবসময় একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখা গেছে। এক বছর ধরে ওই তরুণীর পিছে লেগে আছে সে। তার টার্গেট ছিল যে কোনোভাবে মেয়েটিকে কাছে পাওয়ার। সবসময় অভির সঙ্গে ২০-২২ জনের একটি বাহিনী থাকত। ৮-১০টি মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে চলাফেরা করত। ঘটনার দিন ওই তরুণীকে বাদুরতলা এলাকা থেকে অভিসহ তার বাহিনী তুলে নিয়ে যায়। এরপর কাটনারপাড়া এলাকায় তরুণীর গোপনাঙ্গে ছুরিকাঘাত করে অভি।
জিজ্ঞাসাবাদে অভি পুলিশকে জানায়, আজিজুল হক কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রের সঙ্গে ওই তরুণীর বিয়ে ঠিক হয়। তার পরিবারকে ভয় দেখানো এবং তরুণীকে উচিত শিক্ষা দিতে এ ঘটনা ঘটায় অভি।
এই মামলা তদন্তের কাজে সহায়তাকারী দায়িত্বশীল এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বখাটে অভি ডজনের অধিক মোটরসাইকেল নিয়ে চলাফেরা করত। প্রতিদিন যে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করত সেই অর্থের যোগান আসত কোথা থেকে তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। অভিসহ তার বন্ধুমহলে অভিভাবকদের অবৈধ আয়-ব্যয়ের কোনো উৎস আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে প্রথমদিন এসব ব্যাপারে কোনো তথ্য পুলিশকে দেয়নি অভি।
বগুড়া সদর থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কামরুজ্জামান বলেন, অভির মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। সেখানে অনেক ছবি ও ভিডিও ক্লিপ পাওয়া গেছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে এসব ব্যাপারে তার বক্তব্য নেয়া হচ্ছে। তার বন্ধুমহলের গতিবিধিও পুলিশি নজরদারিতে রয়েছে।
বগুড়া পৌরসভার ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম বলেন, নির্যাতিত তরুণীর পরিবার এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তারা মোবাইল ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন। এলাকাবাসী ও পুলিশি সাপোর্টে তারা চলাফেরা করছে। যেহেতু আসামিপক্ষ প্রভাবশালী সেহেতু মামলার বিচারকাজ বিলম্বিত হলে ন্যায্য বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। এ কারণে চাঞ্চল্যকর মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে স্থানান্তরের জন্য দাবি জানিয়েছেন তরুণীর পরিবার।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর শেখ ফরিদ বলেন, অভি সব স্বীকার করলেও দাবি করেছে সে নেশা করে না। তার কথাগুলো বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
লিমন বাসার/এএম/আরআইপি