রাস্তায় নেমে দুই শতাধিক গাড়ি জব্দ করলেন পুলিশ সুপার
নম্বরবিহীন মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নিবন্ধনহীন সিএনজি ও রিকশা মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার অবৈধ যান চলছে বগুড়া শহরে।
এসব যান বগুড়া শহরকে পরিণত করেছে যানজটের নগরীতে। শহরকে অবৈধ যানজটমুক্ত করতে লিফলেট বিতরণ, সতর্ককরণ এবং মাইকিংয়ের উদ্যোগ নিয়ে ফল মেলেনি।
শেষ পর্যন্ত শহর যানজটমুক্ত করতে সোমবার বগুড়ার পুলিশ সুপার রাস্তায় নামলেন। শহরের সাতমাথায় সকাল থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক অবৈধ যানবাহন আটক ও মামলা দেন পুলিশ সুপার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া শহরে ব্যাটারিচালিত প্রায় পাঁচ হাজার অবৈধ অটোরিকশা, নিবন্ধনহীন ১০ হাজার সিএনজি অটোরিকশা ও ২০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে।
বগুড়া পৌরসভার চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে এসব অবৈধ যান চলাচলকে দায়ী করে বলেন, রাস্তাঘাটের অবস্থা অনুসারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার যান শহরে চলতে পারবে। সেখানে ৫ গুণ বেশি যানবাহন চলছে। এসব যানের অধিকাংশ একাধিক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। এ কারণে নিয়ন্ত্রণের উপায় থাকে না।
শহরের অভ্যন্তরে এবং প্রাণকেন্দ্র থেকে সিএনজি স্ট্যান্ডগুলো স্থানান্তর না করায় সাতমাথা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ি, গোহাইল রোড, স্টেশন রোড, শেরপুর রোড এবং ফতেহ আলী বাজার এলাকায় বড় ধরনের যানজট সৃষ্টি হয় বলে জানান তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা চাঁদা নিয়ে অবৈধ যান চলাচলের সুযোগ করে দেন। দিন দিন এসব অবৈধ যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে।
বগুড়া পৌরসভার তথ্যমতে, নিবন্ধিত সাড়ে পাঁচ হাজার রিকশার বাইরে শহরে চলছে ২০ হাজার রিকশা। বগুড়া বিআরটিএর কাছে নিবন্ধন রয়েছে পাঁচ হাজার সিএনজি অটোরিকশার। অথচ সড়কে ২০ হাজারেরও বেশি সিএনজি অটোরিকশা চলছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করে শহরের এসব অবৈধ যানের বিভিন্ন সমিতি। এরা পৌরসভা ও পুলিশের নির্দেশনার তোয়াক্কা করে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিবন্ধিত একটি সিএনজি অটোরিকশার চালক বলেন, শহরের অভ্যন্তরে সাতমাথা ও চারমাথা মোড় এবং মেডিকেল মোড় পর্যন্ত অন্তত চার জায়গায় প্রতিদিন ৫০ টাকা করে ‘ফি’ দিতে হয়। এসব ফি কারা নেয় জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, বুঝতেছেন না ভাই? টাকা নেবে ঠিকই। কিন্তু বিপদে পড়লে কোনো সহযোগিতা করবে না।
গত কয়েক বছর ধরে চলা জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় একটি বাসস্ট্যান্ডসহ সাতটি সিএনজি স্ট্যান্ডকে শহর থেকে উচ্ছেদ করে আলাদা জায়গায় বসানোর সিদ্ধান্ত হলেও এখনো সেটি কার্যকর করতে উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে, দত্তবাড়ির সিএনজি স্ট্যান্ডকে আজিজুল হক কলেজের পুরাতন ভবনের উত্তরে, সাতমাথা পার্ক রোডের স্ট্যান্ডকে সেউজগাড়ি পানির ট্যাংকের পশ্চিমে, বাইতুর রহমান কেন্দ্রীয় মসজিদের স্ট্যান্ডকে রেলওয়ে স্টেশনের পশ্চিমে, শেরপুর রোডের স্ট্যান্ডকে মায়া মোটরসের পূর্বে, চেলোপাড়া স্ট্যান্ডকে নারুলী শাফি ক্লিনিক এবং চন্দনবাইশা রোড ও চেলোপাড়া বাসস্ট্যান্ডকে কাজিবাড়ী মোড়ে স্থানান্তরের সুপারিশ করা হয়।
এছাড়া সাতমাথা মোড়ের যানজট নিরসনে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর পরিচালিত ইন্টারসেকশন ডিভাইডার নকশা বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়।
পৌরসভার চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, যানজট নিরসনে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শহরে ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয় না।
এর মধ্যে সোমবার সকালে হঠাৎ শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অবৈধ যানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামেন পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়া। তিনি পথে নামলে বগুড়ার সদর থানা, ফাঁড়ি, ট্রাফিক ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা যোগ দেন। মাত্র আড়াইঘণ্টার অভিযানে আটক করা হয় দেড় শতাধিক অটোরিকশা, ২০টি মোটরসাইকেল ও ২০টি ইজিবাইক। এ সময় দেড় শতাধিক গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়।
পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়া বলেন, সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এবং অবৈধ যানবাহনগুলোকে সতর্ক করতে রাস্তায় নেমেছি। এখন থেকে পুলিশের চলমান অভিযান আরও জোরালো করা হবে।
বগুড়া ট্রাফিক ফাঁড়ির টিআই মাহবুবুর রহমান বলেন, গত ১৫ দিনে বগুড়া শহরে ১৫৬২টি অবৈধ যানের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নম্বর ও কাগজপত্রবিহীন মোটরসাইকেল রয়েছে ৮০০টি, অবৈধ সিএনজি রয়েছে ৮১টি। আর বাকি অন্যান্য যানের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়।
লিমন বাসার/এএম/এমএস